অজয় নাথের কক্ষপথে ২য় দিন
গত দিন তিনেক কিছু লেখা হয়নি সময়ের অভাবে। অনেকেই জানতে চেয়েছেন এত বেশি সংখ্যায় ঘুর্ণিঝড় কেন হচ্ছে! ভেবে ছিলাম আজ এই বিষয় নিয়ে লিখব কিন্তু লিখতে বসে মনে পড়ল আজ ১৭ই নভেম্বর। কিন্তু কথা হল এই দিনটির এমন কী বিশেষত্ব আছে যার জন্য দিনটি মনে রাখতে হবে? আমাদের সৌর মন্ডলে চাঁদ ও সূর্য ছাড়া আছে অনেকগুলো গ্রহ উপগ্রহ। তাছাড়া রাতের আকাশে তাকালে হাজার পাঁচেক তারা, ৮৮টি তারা মন্ডল, ছায়াপথ ও আরো অনেক ব্রহ্মান্ড এবং বেশকিছু নক্ষত্রপুঞ্জ দেখা যায় যা আমাদের সৌরজগতের অন্তর্ভুক্ত নয়। আমাদের সৌরমণ্ডলের মধ্যে আরো দুটি বস্তু আছে তা হল উল্কা ও ধূমকেতু। ধূমকেতু মাঝে মাঝে দেখা যায়। এরা ডিম্বাকার বা উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। অবশ্য প্যরাবলিক বা হাই প্যরাবলিক কক্ষপথেও প্রদক্ষিণ করে। অনেক সময় যখন একটি ধূমকেতু সূর্যের খুব কাছে আসে তখন তাকে আমরা বেশ কিছু দিন দেখতে পাই। কখনো খালি চোখে আবার কখনো ছোট টেলিস্কোপ বা বাইনেকুলারের সাহায্যে। যেমন আমরা হ্যালীর ধূমকেতু বা হায়াকুতাকেকে দেখছি। উল্কা আমরা একটু চেষ্টা করলেই দেখতে পাই। একটু অন্ধকার ও পরিষ্কার আকাশের দিকে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকলে একটা আলোর বিন্দুকে পৃথিবীর দিকে নেমে আসতে দেখা যেতে পারে বছরের যে কোন দিন। এই ঘটনা আমাদের কাছে উল্কা পাত নামে পরিচিত। এই প্রতিদিনের দেখতে পাওয়ার বাইরেও কিছু নির্দিষ্ট দিন (রাত) আছে যে রাতে অল্প সময়ের মধ্যে আকাশের কোন একটি নির্দিষ্ট দিক বা তারামন্ডল থেকে অনেক উল্কাপাত দেখা যায় যাদের বলা হয় মিটিওর সাওয়ার বা উল্কা বৃষ্টি। ১৭ নভেম্বর তারিখ এমনই
একটি দিন।
নভেম্বর মাসে মাঝরাতে পূর্ব দিগন্ত থেকে প্রায় ৬০ ডিগ্রি উপরে সিংহ রাশির তারাদের দেখা যায়। ১৭ নভেম্বর ঐ অঞ্চল থেকে বেশ কিছু উল্কাপাত দেখার সম্ভাবনা থাকে। প্রতি ৩৩ বছরে একবার অনেক বেশি পরিমাণে উল্কা বৃষ্টি হতে পারে আকাশের ঐ অঞ্চল থেকে। যার নাম লিওনিড মিটিওর সাওয়ার বা সিংহ রাশির উল্কা বৃষ্টি। শেষ বার এই সম্ভাবনা ছিল ১৯৯৮ সালের ১৭/১৮ নভেম্বর রাতে। সেবার এটা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছিল ফলে মানুষের মনে একটা প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছিল তবে ভারতবর্ষ থেকে সেভাবে দেখা যায়নি। মানুষ অত্যন্ত হতাশ হয়েছিলেন। ২০৩১ সালে আবার সেই সম্ভাবনা থাকছে। উল্কা পাতের কারণ হল ধূমকেতুরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলে যাওয়ার সময় তাদের গা থেকে বেরিয়ে বেশ কিছু পরিমাণ বরফে ঢাকা ধুলিকনা তাদের কক্ষপথে থেকে যায়। এগুলিকে বলা হয় মিটিওরাইট। যখন পৃথিবী ঐসব ধূমকেতুর কক্ষপথের খুব কাছে আসে তখন মিটিওরাইট গুলো পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের জন্য পৃথিবীর দিকে চলে আসে ও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সাথে ঘর্ষণের ফলে তাদের তাপমাত্রা বাড়ে। মিটিওরাইট গুলি জ্বলে উঠে। টেম্পল টোটাল নামের একটি অস্পষ্ট ধূমকেতু প্রতি ৩৩ বছরে একবার সূর্য প্রদক্ষিণ করে। প্রতি বছর ১৭ই নভেম্বর পৃথিবী টেম্পল টোটাল ধূমকেতুর কক্ষপথের খুব কাছে চলে আসে। টেম্পল টোটালের কক্ষপথে ছড়িয়ে থাকা মিটিওরাইট থেকেই উল্কাপাত দেখা যায় বছরের এই সময়। ১৮৩৩ সালের ১৭ নভেম্বর রাতে ইউরোপের কিছু অংশের মানুষ এক প্রবল উল্কাপাত বা উল্কাবৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেন। ১৮৬৬ সালে জ্যোতির্বিদ টেম্পল ও পরে টোটাল আলাদা ভাবে লিওনিড মিটিওর সাওয়ার বা সিংহ রাশির উল্কা বৃষ্টির কার্য কারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করেন। তাই ধূমকেতুর নাম ‘টেম্পল টোটাল’। এই ধূমকেতুর ছেড়ে যাওয়া মিটিওরাইট কনা ১০ মিলিমিটার ব্যাস ও আধা গ্রাম পর্যন্ত ওজনের হতে পারে। তাই সিংহ রাশির এই বাৎসরিক উল্কাপাতের রাতে অত্যন্ত উজ্জ্বল ও আলোর বলের মত উল্কা একটু ধীর গতিতে নেমে আসতে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ধরনের উল্কাপাত ‘ফায়ার বল’ নামে পরিচিত।
তাহলে আজ রাতে একবার চেষ্টা করে দেখা যেত পারে উল্কা বৃষ্টি না হোক বেশ কিছু উল্কা পাত দেখা যায় কিনা বা একটা ফায়ার বল?
