চিকা ওফিলি(Chika Ofili) – সম্প্রতি ১২ বছরের এই বালক চমকে দেবার মতো গণিতের একটি নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে ফেলেছে। উদ্ভাবনের বিষয়টি নতুন না হলেও পদ্ধতিটি একবারই নতুন। আমরা যখন ছোটবেলায় বিভাজ্যতার নিয়ম শিখেছি বা এখনও যারা শিশুদের এই বিষয়টি শেখানোর দায়িত্ব পালন করেন তারা একটু খেয়াল করে দেখবেন বইগুলোতে ২,৩,৪,৫,৬,৮,৯ এদের দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম থাকলেও ৭ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম থাকে না। চিকা এই ৭ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়মটি অন্য ভাবে আবিষ্কার করেছে। তবে ৭ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম যে আগে আবিষ্কৃত হয়নি এমনটা নয় কিন্তু চিকার পদ্ধতিটি একেবারে নতুন ও অভিনব। চিকার এই উদ্ভাবনী ইতিমধ্যে ট্রু লিটল হিরো অ্যাওয়ার্ড(TruLittle Hero Award) জিতে ফেলেছে। পদ্ধতিটি জানার আগে চলুন জেনে নিই উদ্ভাবনের পেছনে লুকিয়ে থাকা গল্প –
নাইজেরিয়ার এই বালক পড়াশোনা করে লন্ডনের ওয়েস্টমিন্সটার আন্ডার স্কুলে। সেই স্কুলের গণিতের শিক্ষিকা হলেন মিস মেরি ইলিস। যিনি ‘দি এলিয়েনস হ্যাভ ল্যান্ডেড অ্যান্ড ১৭৪ আদার প্রবলেমস’ (‘The Aliens Have Landed and 174 other problems’) নামে একটি বইও লিখেছেন।
বিদ্যালয়ের দীর্ঘকালীন ছুটির সময় তিনি একটি অ্যাসাইনমেন্ট দেন। যেখানে ছিল ভাগ না করে কোন সংখ্যার বিভাজ্যতা যাচাই করা। সেই বইতে ৭ দ্বারা বিভাজ্যতার কোন নিয়ম ছিল না কারণ এমনিতে ৭ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম খুব সহজও নয় এবং মনে রাখার মতনও নয়। আর এখান থেকেই ভাবতে শুরু করে চিকা।
শিক্ষিকা মিস মেরী ইলিস জানাচ্ছেন, “গত শুক্রবার ক্লাসে চিকা জানায় সে নতুন কিছু বলতে চায় এবং তা সকলের সামনে উপস্থাপিত করে এবং আমি চমকে উঠি। এমন কোন সংখ্যা পাওয়া যায়নি যার ক্ষেত্রে এই নিয়মটি প্রযোজ্য হয় না।”
চলুন দেখি এবার কি সেই পদ্ধতি –
▪ যে কোনো সংখ্যার এককের অংকের সাথে ৫ গুণ করে বাকি সংখ্যার সাথে যোগ দিতে হবে। যোগফল ৭ দ্বারা বিভাজ্য হলেই মূল সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
▪ যদি দেখা যায় সংখ্যাটিকে ওই পদ্ধতি একবার প্রয়োগ করার পর প্রাপ্ত যোগফল বড় সংখ্যা আসে, তাহলে তাকে আবার একই ভাবে ওই প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যেতে হবে।
উদাহরণ :
১৫৬৭ ~ ১৫৬+৭×৫=১৯১
১৯১ ~১৯+১×৫=২৪
২৪, ৭ দ্বারা বিভাজ্য নয়, সুতরাং ১৫৬৭,৭ দ্বারা বিভাজ্য নয়।
অন্যদিকে হিসাব করে দেখুন 9065 , 7 দ্বারা বিভাজ্য।বিষয়টি খুব সামান্য (কিংবা এই পদ্ধতি কেও আগেই জানেন কিন্তু প্রকাশ্যে আসে নি এমনটা )হলেও তার চিন্তা কে কুর্নিশ জানাতেই হয়।
কী ভাবছেন আমাদের এখানে চিকাদের পাচ্ছি না কেন? পাবো কি করে? ছোটো থেকেই শিশু মনের মধ্যে গণিতের প্রতি একটা কৃত্রিম ভীতি তৈরি করে দেওয়া হয়। তারপর স্কুলের শিক্ষকমশাইদের দেওয়া বাড়ির কাজ ছাত্রের হাত দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে গৃহ শিক্ষকের হাতে বা অভিভাবকের কাছে। আবার বিপরীত পথে উত্তর চলে আসছে স্কুলের মাস্টার মশাই কাছে। এই তো অবস্থা। স্বাধীন মুক্ত চিন্তার বিকাশের সুযোগ কই? বাধা ধরা গতের হোম টাস্ক ও নির্ধারিত সময়ে সিলেবাস সমাপ্ত করা এসবই শেষ করে দিচ্ছে আমাদের প্রতিটি ছাত্রদের “চিকা” হবার সম্ভাবনাকে।


