গাছটির বাংলা নাম করচ, হিন্দি নাম করঞ্জ।
আলিপুরের চিড়িয়াখানায় হিন্দি নামটিই বাংলায় লেখা হয়েছে।
সাহেবি নাম Indian beech ও অন্যান্য।
দ্বিপদী বৈজ্ঞানিক নাম Pongamia pinnata বা এখন Millettia genus ভুক্ত হয়ে নতুন দ্বিপদী নাম Millettia pinnata.
করচ গাছ খুব কঠিন পরিস্থিতিতেও সামলে নেয়। উচ্চ তাপমাত্রা বা মরু অঞ্চলের মত মাটিতেও বেশ টিকে থাকে। এর দীর্ঘ tap root মাটির অনেক গভীরে গিয়ে জল খুঁজে নেয়।
আবার জলাভূমিতেও গাছটি স্বচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকে।
এই কঠিন প্রাণের জন্য করচ শুধু ছায়া বা শোভাবর্ধনের জন্যই নয়, windbreak হিসাবেও কাজে লাগানো হয়। যেসব অঞ্চলে প্রায়শই ঝড় হয়ে ফসলের ক্ষতি করে, সেখানে সারিবদ্ধভাবে করচ গাছ লাগিয়ে দিলে তা ঝড়কে প্রতিহত করে। সেই হলো windbreak. করচের lateral roots একে ঝড়ের দাপট সামলাতে সাহায্য করে।
অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন হাতির উপদ্রব বন্ধ করার জন্য হাতি করিডোরে এই গাছ কেন লাগানো হয়। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, করচের ফলের দুর্গন্ধ ও তিক্ত স্বাদ হাতি একবার পেয়ে গেলে ওই চত্বরে আর আসেনা। তাদের স্মৃতি শক্তি খুব প্রখর। ব্যবহারিক দিক থেকে করচ গাছ অনেকটা নিম গাছের মতো। এর প্রতিটি অংশই উপকারি।
করচ তেল বহুযুগ ধরে আয়ুর্বেদিক ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর ডাল দিয়ে লোকে দাঁতন করে। ফুল ফোটা শেষ হলে, বাদামি রঙের চ্যাপ্টা শুঁটির মতো এর যে ফল হয়, তার মধ্যে থাকে বীজ। কিন্তু সেই শুঁটি নিজে নিজে ফাটে না, মাটিতে পড়ে পচে তবেই অঙ্কুরোদগম হয়।
সেই বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল হল Pongamia oil. তা দিয়ে প্রদীপ জ্বালানো যায়, সাবান তৈরি হয়। সেই তেল আবার একরকমের bio-diesel. জাট্রোফা ও ক্যাস্টর তেলের সঙ্গে মিশিয়ে জেনারেটর চালিয়ে সেচ পাম্প চালানো যায়, গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে আলোর ব্যবস্থা করা যায়।
গাছটির আর একটি বড় গুণ হল এ মাটিতে নাইট্রোজেন জোগায় (Nitrogen fixation). এর root nodule বাতাসের নাইট্রোজেনকে ammonium যৌগে রূপান্তরিত করে মাটির নাইট্রোজেনের ঘাটতি মেটায়।
করচের মোটা গুঁড়ির গায়ে গুটিগুলি মজার, চিড়িয়াখানার সঙ্গে মানানসই, পশুপাখির মুখের আদল যেন তাতে।
করচের ফুল ভারী সুন্দর, থোকা থোকা হয়ে ফোটে, দেখতে মটর বা সিমের ফুলের মতো। এর অর্ধেকের বেশি কুঁড়ি না ফুটেই ঝরে যায়। সেই কুঁড়ি ও ঝরা ফুলে গাছের নিচে যেন চাদর বিছিয়ে দেয়।


