যিনি সোনার গহনা তৈরি করেন তিনি goldsmith, যিনি লোহার জিনিস তৈরি করেন তিনি blacksmith. সেই সূত্রে যিনি হাতুড়ি তৈরি করেন তিনি কি hammersmith হবেন? হতে পারেন। কিন্তু আমি যে হ্যামারস্মিথের কথা বলছি তিনি কোনো মানুষ নন, তা লন্ডনের কাছে একটি শহর।
সেই শহরে অষ্টাদশ শতকের গোড়ায় জেমস লি (James Lee) নামে এক স্কটিশ উদ্ভিদপ্রেমী বাস করতেন। তাঁর সুনাম এতই ছড়িয়ে পড়ে যে (উদ্ভিদ ও পশুর দ্বিপদী নামকরণের জনক) কার্ল লিনাস তাঁর নামে এই গাছটির নামকরণ করেন লিয়া (Leea), Leea rubra.
গাছটির বাংলা নাম লাল কুকুরজিহ্বা বা লাল কুরকুর। সংস্কৃতে নাম ছত্রী। ইংরাজি নাম Red leea বা Hawaiian holy.
একটি গল্পে পড়েছিলাম, এক সাহেবের পোষা সিংহটি একদিন মনিবের পা চাটতে চাটতে চামড়া পাতলা হয়ে রক্ত চুঁয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে। রক্তের স্বাদ পেয়ে সিংহের চোখের চাহনি বদলে যায়। সাহেব দ্রুত ইঙ্গিত করে তাঁর সহকারীকে গুলি চালাতে বলেন। সিংহটি মারা যায়, মনিব রক্ষা পান।
গল্পের কথা থাক। মোটকথা সিংহের জিভ খুব খরখরে, অনেকটা sandpaper এর মতো। কিন্তু কুকুরের জিভ ততটা খরখরে নয়। তবে তা রঙে লাল।
লিয়া রুব্ৰা গাছটির ফুলের কুঁড়ি দেখতে ওইরকম লাল খরখরে জিভের মতো। তাই নাম কুকুরজিহ্বা। তবে সিংহজিহ্বা হলে আরো মানানসই হতো হয়ত।
অস্ট্রেলিয়ার গাছ, কিন্তু ভারত, বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অজস্র দেখা যায়। কুকুরজিহ্বা ছায়াছন্ন, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ভালো হয়। গাছটি নাকি আপাদমস্তক বিষাক্ত।
কুকুরজিহ্বা ফুলের সবচেয়ে মজার জিনিস হল এর পরাগমিলন। পরিভাষায় তাকে বলে সিংক্রোনাইসড ডাইকোগ্যামি (synchronized dichogamy).
পরাগমিলনের ক্ষেত্রে কোনো ফুল একই সাথে একবার স্ত্রী ফুল এবং একটু পরেই পুরুষ ফুল হিসাবে আচরণ করলে তাকে ডাইকোগ্যামাস ফুল বলে। কুকুরজিহ্বার একটি থোকায় প্রায় সমান সংখ্যক স্ত্রী ও পুরুষ ফুল থাকে। কখনো কখনো এমন হয়, স্ত্রী ফুলগুলি পরিণত হয়ে গেছে কিন্তু পুরুষ ফুল তখনও অপরিণত, তখনই আসে ডাইকোগ্যামি। অর্থাৎ, ওই স্ত্রী ফুলটিই পুরুষ ফুলের কাজ করে।
একটি স্ত্রী ফুল পরে পুরুষ ফুলে রূপান্তরিত হলে তাকে প্রোটো-গাই-নাস (protogynous) ফুল বলে। আর যদি ফুলটি প্রথমে পুরুষ ও পরে স্ত্রী ফুলে রূপান্তরিত হয় তাকে প্রো-ট্যান-ড্রাস (protandrous) ফুল বলে।
এসব কোনো কাজের কথা নয়। আমরা বরং লাল কুকুরজিহ্বা ফুলটি দেখি।
