স্যার, ক্লাসে ঘুটি খেলছে।গ্রামের স্কুল এই অভিযোগ মাঝে মাঝেই শুনতেই হয়। মন না চাইলেও অল্পস্বল্প বকাঝকা করতেও হয়। আসলে বকা-ঝকা আর যাই হোক চিরস্থায়ী কোনো সমাধান হতে পারে না, বিশেষ করে এই ষষ্ঠ শ্রেণিতে। তার চেয়ে বিকল্প কিছু তুলে দেওয়া বেশি যুক্তিযুক্ত। সেই ভাবনা থেকে একদিন ছেলে মেয়েদের বললাম বাড়িতে সাপ-লুডোর খেলার বোর্ড এর মতো একটি পাতায় 1-100 অবধি ঘর কেটে নাম্বারিং করে নিয়ে আসতে আর সেই সাথে লুডোর ঘুটির মতো বিভিন্ন রঙের চারটি করে ঘুটি। ব্যাস ছেলে-মেয়েরা পরের দিন এনে হাজির। শোনো এবার ক্লাসে ঘুটি খেলা বন্ধ, তার বদলে আমি শেখাচ্ছি নতুন খেলা। চলো সবাই বেঞ্চে মুখোমুখি বসে পড়ি।
এবার মন দিয়ে শোনো খেলার নিয়ম। নিয়ম হল –
১)প্রথমে দুজন -দুজন করে এই খেলা খেলতে হবে। দুজন আলাদা আলাদা দুটি সংখ্যা ধরো। প্রথম দিকে ছোট ছোট সংখ্যা ধরার চেষ্টা করো। পরে বড় ধরবে।
২)এবার প্রথমজন যে সংখ্যাটি ধরেছে সেই ঘরের নামতা মতো করে একটি রঙের ঘুটি বসাও। দ্বিতীয় জন একই ভাবে অন্য রঙের ঘুটি বসাও। এভাবে এগিয়ে চল। ধর একজন ধরেছে ৫, অন্যজন ৭। তাহলে প্রথমজন প্রথমে ঘুটি বসাবে ৫ ঘরে, ১০ ঘরে দ্বিতীয় জন বসাবে ৭, ১৪ ঘরে, এভাবে এগিয়ে চলো।
৩)এবার লক্ষ্য করো তো কোন সংখ্যার ঘরে দুজনের ঘুটি বসছে।যেই মাত্র একই ঘরে দুজনের ঘুটি বসে যাবে ওমনি খেলা বন্ধ।
ছেলে-মেয়েরা প্রবল উৎসাহে শুরু করে দিল। কিছুক্ষণ পর থেকে খেলার ফলাফল আসতে শুরু করল। দেখলাম কেও ধরেছে ৬ ও ৮ তাদের মিলেছে ২৪ ঘরে, আবার কেউ ধরেছে ১০ আর ১২, তাদের মিলেছে ৬০ ঘরে।এভাবে সবার ফলাফল দেখার পর আমি বলতে শুরু করলাম।
এবার তোমরা খেলাটা তিন মিলে খেলবে, আর বড় বড় সংখ্যা ধরবে।প্রয়োজনে ১০০ চেয়ে বেশি ঘর করবে, কিন্তু তার আগে কিছু কথা মন দিয়ে শোনো।
আচ্ছা তোমরা ভালো করে চিন্তা করে বলত তোমার যে যে সংখ্যা ধরেছে, তার জন্য যা ফলাফল এল, আর যেভাবে খেললে কোনো মিল পাচ্ছ এদের মধ্যে। অনেক চিন্তা করার একজন খাতায় লিখে টিকে বললো স্যার এটা তো ল.সা.গু নির্ণয়। আমি প্রশ্ন করলাম কি করে? ছেলেটি উত্তর দিল, স্যার খাতায় কষে দেখলাম। আমার প্রথমেই মনে হল যেহেতু নামতা মতো করে ঘুটি সাজাচ্ছি, তার মানে ওগুলি গুনিতক। আর দুজনের সবচেয়ে ছোট সাধারণ গুনিতক হল লসাগু। বা: একদম ঠিক। তাহলে চল তিনজন মিলে খেলতে শুরু করে দাও।