”বোমারু জঙ্গি যত বিমানের ঝাঁক থেকে, বোমা নয়, গুলি নয়, চকোলেট টফি রাশি রাশি…প্যারাট্রুপারের মতো ঝরবে…।” এই উড়ানটা উড়াল দেবে বলে এরোপ্লেন আবিষ্কার করা হয়েছিল। যেমন কামান আবিষ্কার হয়েছিল মশা মারার জন্য। জোকস্ অ্যাপার্ট! যেখানে মানুষের পা পৌঁছায় না, সেখানে সবুজ ছড়াতে হবে। এখন মডেল কে হবে, না সেই পৌরাণিক পুষ্পবৃষ্টির ধারণা। ভারতের ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট ঠিক এইভাবে জলে জঙ্গলে সবুজ ছড়ানোর কাজ শুরু করেছে, বেশ কিছুদিন হল।
পরিভাষায় বলা হয় এরিয়াল সিডিং বা ডার্ট সিডিং। তবে দুটোর মধ্যে একটা সূক্ষ পার্থক্য আছে। খুব উঁচু জায়গা কিম্বা মানুষের পক্ষে পায়ে হেঁটে পৌঁছানো অসম্ভব এমন স্থানগুলোতে হেলিকপ্টার বা এরোপ্লেন থেকে বীজ ফেলা হলে তাকে বলে এরিয়াল সিডিং। আর একমুখ খোলা লোহার রডের পেটের মধ্যে বীজ বোঝাই করে খোলামুখটাকে মাটির মধ্যে পুঁতে দিয়ে বীজগুলো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবার নাম ডার্ট সিডিং। ঝোপঝাড়ে ঢাকা পড়ে যাওয়া জায়গা, যেখানে আকাশ থেকে বীজ ছড়ালেও মাটিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম, সেখানে এই ডার্টের মাধ্যমে বীজ ছড়ানো হয়। দিল্লির জঙ্গলে এর আগেও ডার্ট সিডিং করা হয়েছে, দিল্লি হাইকোর্টের একটি রায় মেনে ফের এই ধরনের বীজবপনের ভালোমন্দ সামনে এসছে ।
আমেরিকার মতো দেশগুলিতে শস্যবীজ রোপণ করার জন্য এমনিতেই এরিয়াল সিডিং ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া দাবানলের পর ক্ষতিগ্রস্ত অংশে ঘাসের বীজ ছড়িয়ে দেবার মত ভীষণ শ্রমসাধ্য কাজগুলি সহজে করতেও এরিয়াল সিডিং প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে ডার্ট সিডিং আকাশ থেকে বা মাটি কামড়ে দুভাবেই করা যায়। আসোলা ভাট্টি ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারিতে ১৯৯০ এর দশকেও বনকর্মীরা বহু বীজ কর্ষণ করেছিলেন ডার্টের সাহায্যে। তবে গোটাটাই পায়ে হেঁটে।
সুবিধা অসুবিধার দিক থেকে দেখলে, এরিয়াল সিডিঙের থেকে ডার্ট সিডিং দু’কদম এগিয়ে আছে। কারণটাও সোজা, অত উপর থেকে যেসব বীজ ছড়ানো হয়, তাদের অধিকাংশেরই অঙ্কুরোদগম হয় না মাটির সঙ্গে মিশতে না পারার দরুণ। অন্যদিকে ডার্ট সিডিঙে বীজের মাটির সঙ্গে মিশে যাবার সম্ভাবনা একশোয় একশো, তাদের অঙ্কুরিত হবার সম্ভাবনাও অনেক বেশি।
২০১৫ সালে দিল্লি হাইকোর্টে বায়ুদূষণ নিয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়। গতবছর আইন ছাত্র মিহির গর্গ ও রাশি জৈনও একই বিষয়ে একটি পি আই এল দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত দোসরা ডিসেম্বর বিচারপতি জি এস সাস্তানি ও এ জি ভামবানীর বেঞ্চ বনদপ্তরের কাছ থেকে জানতে চান দিল্লিতে বনাঞ্চল বাড়ানোর জন্য হেলিকপ্টার থেকে ডার্ট সিডিং করা কতটা যুক্তিযুক্ত হতে পারে। কিন্তু বনদপ্তর সূত্রে জানানো হয়, দিল্লিতে যেহেতু অনধিগম্য জঙ্গল নেই বললেই চলে, তাই সেখানে হেলিকপ্টার থেকে ডার্ট সিডিং করার খুব একটা যুক্তি নেই।
সম্প্রতি হরিয়ানার পাঁচখুলা জেলার শিবালিক পার্বত্য অঞ্চলে দ্রোণ থেকেও জাম, নিম, আমলা, খয়েরের মতো প্রচুর বীজ ছড়ানো হয়েছে। এই দ্রোণ থেকে একেকদিনে প্রায় কুড়ি থেকে তিরিশ হাজার গাছের বীজ ছড়ানো যেতে পারে বলে হিসাব করেছেন হরিয়ানা বনদপ্তর। একেকবারে প্রায় দু কেজি বীজ নিয়ে ওড়ার ক্ষমতা রাখে দ্রোণগুলি এবং মাটি থেকে ১০ -১৫ মিটার ওপর দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ ছড়াতে ছড়াতে চলে।
বীজবৃষ্টির কনসেপ্টটা এক্কেবারে হেলাফেলার নয়, তাই না! কে বলতে পারে মোদীর রাফালে যুদ্ধবিমান অদূর ভবিষ্যতে বীজ বয়ে নিয়ে যাবে না … কাশ্মীরে কিংবা কাকদ্বীপে ।
তথ্যসূত্র : দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস; দ্য ট্রিবিউন
লেখক