চিবাে
পাহাড়, পাহাড়ি গ্রাম, ঝরণা যারা ভালােবাসেন তাদের কাছে চিবানাের মতােই বা চিবিয়ে খেয়ে ফেলার মতােই এ স্থান। তবে দাঁত দিয়ে নয়, মন দিয়ে। হৃদয়ের গভীরতম স্থল থেকে। খুব চেনা কালিম্পং-এর কাছেই ছােট্ট এক গ্রাম। সিকিম হাইওয়ে ধরে পাহাড়ি বাঁক পেরিয়ে যত গাড়ি ছুটবে তত মনে হবে এ পথ যদি না শেষ হয়। সুনতালে, লােহাপুর, কালিঝােরা পেরােনাের সময় আপনার সঙ্গিনী হবে তিস্তা। সুনতালে বিখ্যাত কমলার জন্য, শীতে এলে দেখবেন পাহাড়ি ঢাল আর গ্রামীণ বাজার উপছে উঠছে কমলা রঙে। সুনতালেতে পাওয়া যায় টাটকা মাশরুমও। উত্তর বঙ্গে পাহাড়ি বসত বাড়িগুলির একটি বৈশিষ্ট্য আছে যে সব বাড়িতেই হাজারাে রঙিন ফুলের টব আর জানলায় সাদা লেসের পর্দা বােধহয় থাকবেই। চিবােও ব্যতিক্রম নয়। রিসর্টের সামনে অব্দি গাড়ি যাবে না, সামান্য ঐ পথটুকু পদ যুগলই ভরসা। রিসর্টগুলি পরিবেশ বান্ধব। প্রত্যেকটির ঘর এবং বারান্দা থেকে বরফ সাদা চাদরে মােড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রত্যক্ষ করা যায়। অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং রুচিসম্মত ঘরদোর। আছে প্যারাগ্লাইডিং-এর ব্যবস্থা। ডাইনিং এরিয়াটি প্রকৃতির কোলে। চারাদিকে তাকিয়ে দেখলে টেবিলে রাখা খাবারের কথা ভুলে যাবেন। তবে অবশ্যই চেখে দেখবেন চিকেন আইটেম আর মােমাে। অসুস্থ বা বয়স্ক ব্যক্তি ছাড়া রুম সার্ভিসের চল নেই। শনিবার কালিম্পং-এ হাট বসে, যেতে পারেন সেখানেও। কালিম্পং বিখ্যাত মধু, চিজ আর ললিপপের জন্য।
শেষেক্তো দুটি চমরি গাইয়েরদুধ থেকে তৈরি। সকালে ঘুম ভাঙবে পাখির ডাকে। ধূমায়িত দার্জিলিং চা হাতে,কনকনে ঠাণ্ডায় রােদে দাঁড়িয়ে সবুজ পাহাড় আর ঐ দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার
চূড়ান্ত বিলাসিতা উপভােগ করুন চুটিয়ে।
কটেজের পিছনে পাহাড়ের মাথায় মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট। রৌদ্রজ্জ্বল দিনে দূরে তাকালে দেখতে পাবেন দার্জিলিং শহর। রাবাংলা আর আপনার দেখা কালিম্পং। চাঁদনী রাতের ঐ চেনাস্থানগুলিই দেখবেন ঝিকমিক করছে তারার মতাে। হাজারাে ব্যস্ততার ফাঁকে সামান্য অক্সিজেন তরতাজা রাখবে
আপনাকে বহুদিন।
যাতায়াত :
উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনে এনজেপি, সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে কালিম্পং, কালিম্পং থেকে গাড়িতে মাত্র তিন কিলােমিটার গেলেই চিবাে। শেয়ার জিপে এলে নামুন তিস্তা বাজারে, ফোনে জানিয়ে দিলে রিসর্টের গাড়ি চলে আসবে। বাসে এলে নামতে হবে আট মাইল-এ।
থাকা-খাওয়া :
মাথা গোঁজার অন্যতম ঠাই হিমালয়ান ঈগল রিসর্ট।
ভাড়া ১৫০০ টাকা,যদি ১৭০০ টাকা, ২৫০০ টাকা। সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থা পাবেন এ রিসর্টে ।তবে
মনােরঞ্জনে মাতুন প্রকৃতির সঙ্গেই। কাজেই টিভির আশা করবেন না। মােবাইল, ল্যাপটপে সিনেমা, গান না চালিয়ে কান পেতে শুনুন নিস্তব্ধতা। রিসর্টের কর্ণধার সুজান খেতি। কর্মঠ এবং সদাশয় এক মহিলা। যােগাযােগ : ৯৮৩০৬৪৯৩৭৬ বা ৮৯৭২০৩০৪৮৪। বর্ষাকাল বাদে সারা বছর যাওয়া যায়।
এখান থেকে খুব কাছেই সিলেরিগাঁও, ঘুরে আসতে পারেন। ভালাে জুতো এবং অন্য টর্চ সঙ্গে রাখবেন।
লেখক – প্রবীর বসু