কাবুল, কান্দাহার বা সােয়াট ভ্যালি যেতে ইচ্ছে করে নাকি? সিলভেস্টার স্ট্যালােনের মারকাটারি ছবি রাম্বাে-৩’র পুরাে শুট্যিং ঐ আফগানিস্তানেই। কিন্তু সেখানে যাবার তাে বহু হ্যাপা, দু-চারদিনের ব্যাপারও নয়। দরকার কী? এই সুজলা-সুফলা বঙ্গদেশেই খুঁজলে পাবেন এক চিলতে আফগানি উপত্যকা। প্রায় সওয়া বর্গ কিলােমিটার এলাকা জুড়ে ল্যাটেরাইট মাটির (লাল মাকড়া) কারুকার্যখচিত ভূমিরূপ। বায়ুর ক্ষয়কাজ জন্ম দিয়েছে জুগ্যান, ইয়াদাং ধরনের ভূখণ্ড। কোথাও বা আবহবিকারজনিত শল্কমােচন, খণ্ডীকরণ এক অনন্য মাত্রা দিয়েছে। সমগ্র অঞ্চলটিকে ভােরে এবং শেষ বিকালে সূর্যালােক এই লালচে গেরুয়া বর্ণের পাথুরে মাটিতে পড়লে পুরাে চত্বরটি হয়ে ওঠে গনগনে জ্বলন্ত উনানের মতাে। হয়তাে একারণেই উপরােক্ত নামকরণ। তবে গনগনি একেবারেই যে উষররুক্ষ- শুষ্ক মরুভূমি প্রায় এমন ভাবলে খুব ভুল হবে। কচিকলাপাতা রঙা চারণভূমি, ঘন সবুজের গাছের সারি, বিক্ষিপ্ত ঝােপ-জঙ্গল সবই চোখে পড়বে। আছে পুরাণ, আছে ধুলােমাখা ইতিহাস।



পুরাণমতে মধ্যম পাণ্ডব ভীম এস্থানেই বধ করেন বকরাক্ষসকে। ইতিহাসের পাতায় মেদিনীপুর সর্বদাই অগ্রভাগে স্থান পেয়েছে স্থানীয় মানুষদের স্বাধীনতা স্পৃহার কারণে। এ গনগনিও (বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর, গড়বেতা অঞ্চল) তার সাক্ষী। ১৭৯৮-৯৯ সালে পাইক বা চূয়াড় বিদ্রোহ ছড়িয়ে। পড়েছিল মেদিনীপুরে। বহু চূয়াড় নেতা সদলবলে আত্মগােপন করেছিলেন গনগনিতে। ব্রিটিশরা খবর পেয়ে এক রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর জীবন্ত কবর দেয় বা গাছের ডালে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয় ঐ বিদ্রোহী চূয়াড় বা পাইকদের। দেখতে পারেন ভগ্ন রায়কোটা দুর্গ, সর্বমঙ্গলা মন্দির। যা ওড়িশি আদলে নির্মিত এবং হাজার বছরের আমীন। গনগনির উপর দিয়ে বয়ে গেছে স্বচ্ছ, তিরতিরে শীলাবতি। বহতা নদীর বুকে জন্ম নিয়েছে হলুদ বালু ঢাকা চর। ইচ্ছা করলে নৌকায় ভেসে পড়া যায়। দরে ধোঁয়া উড়িয়ে ছুটে চলা ট্রেন আপনাকে মুহুর্তের জন্য নষ্ট্যালজিক করে তুলবেই।
যাতায়াত :
নিকটবর্তী রেলস্টেশন গড়বেতা। সেখান থেকে অটোতে গনগনি ২ কিলােমিটার। রূপসী বাংলা, হাওড়া পুরুলিয়া, আরণ্যক এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি গড়বেতা থামে অথবা গাড়িতে সরাসরি আসতে পারেন। দূরত্ব ১৭৫ কিলােমিটার কলকাতা থেকে।
থাকা-খাওয়া :
গড়বেতা রেলস্টেশনের কাছাকাছি মামনি লজ-৯৯৩৩৪৯৭৫১৬, এছাড়া চন্দ্রকোণা রােডের ধারে গীতাঞ্জলী লজ – ০৩২২৭২৮২৩২২। গনগনিতে থাকার কোনাে জায়গা নেই। এটি প্রায় জনশূন্য এলাকা। তালিবানি সন্ত্রাসের ভয় না থাকলেও, দল বেঁধে ঘােরাঘুরি করুন এবং অবাঞ্চিত ঘটনা এড়াতে আঁধার নামার আগেই বাসায় ফিরুন। গড়বেতার পরের স্টেশন বগরি রােড, আছে আপ্যায়ন গেস্ট হাউস – ৮৩৪৮৬৯৪৮০০।
কাছে দূরে অচিনপুরে : ভ্রমণ গাইড
লেখক – প্রবীর বসু