“পৃথিবীর আয়ু আর ১০০ বছর।” কথাটি আমার নয়, স্টিফেন ডব্লু হকিং-এর।
৬২ বছর পরে আবার বিজ্ঞানীদের রাস্তায় নামার পালা।পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযােগিতা রদের আহ্বানে দার্শনিক রাসেল এবং বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে যৌথ ইস্তাহার প্রকাশ করতে হয়েছিল এই পথিবীকে বাঁচাতে। ততদিনে জাপানের হিরােশিমা ও নাগাসাকি শহরে মার্কিন পারমাণবিক বােমায় আড়াই লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
৭৫ বছর বয়সে হকিং বিশ্ব মানবতার কাছে আকুল আহবান জানান এখনই দেশের ও রাষ্ট্রের সীমানা ভুলে একজোট হয়ে পথে নামতে হবে পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখতে গেলে। নাহলে আর ১০০ বছরের মধ্যে অন্য গ্রহে বসবাস করতে হবে মানবজাতিকে। সরাসরি আঙুল তুলেছিল বিশ্বের সবচেয়ে মানবধ্বংসকারী পারমাণবিক বােমা বিস্ফোরণে অভিযুক্ত বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডােনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি কিমের বিরুদ্ধেও সােচ্চার হয়েছেন হকিং।
পৃথিবীর প্রথম সারির গবেষণা পত্রিকা নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ-এ জুলাই মাসে তার দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে যাতে স্টিফেন ডব্লু হকিং গাণিতিক ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে পৃথিবীতে মানুষ ও জীবনের অস্তিত্ব আর ১০০ বছর। স্টিফেন জুনের ৪ তারিখে ব্রিটিশ সংবাদ-সংস্থা বি.বি.সি. কে বলেন এই হাজার হাজার বছরের মানবসভ্যতার মৃত্যু ত্বরান্বিত এবং অন্য গ্রহে বসবাসের কথা উনি বারংবার বলেন।
বলা হয়েছে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২১০০ সাল নাগাদ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। পৃথক ভাবে করা দুটি গবেষণায় এই কথাই বলা হয়েছে।সংবাদ সংস্থা C.N.N. এই সংবাদ প্রকাশ করে বলেছে যে আলাদা গবেষণার সিদ্ধান্ত এক অর্থাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবেই। এই গবেষণায় পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে এই শতাব্দীর শেষপর্যন্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ। আর ১.৫ ডিগ্রি-র নীচে থাকার সম্ভাবনা ১ শতাংশেরও কম।এই ২ ডিগ্রি সীমা ২০১৬ সালে প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত। হিসাব কষে দেখানাে হয়েছে যদি আমরা এই সীমানা অতিক্রম করি তাহলে
উত্তরমেরুর বরফ গলে পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রাণীজগতের পরিবর্তন হবে।
সমুদ্রের পারের মানুষদের উদ্বাস্তু হওয়া, বহু প্রজাতির বিলুপ্তি, ভয়ংকর খরা, দাবানল বৃদ্ধি, ঘনঘন ঘূর্ণিঝড়, পানীয় জলের সংকট, ভূমিকম্প এবং ফসল উৎপাদন হ্রাস শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-র দেওয়া তথ্যে ১ কোটি ২৬ লক্ষ মানুষ চরম আবহাওয়া ও দূষণজনিত কারণে প্রতি বছর মারা যান এই পৃথিবীতে। ২০৩০ সাল থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনে মৃত্যুর সংখ্যা আরও ২ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু যােগ হবে।
এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এক দিন আগে বি.বি.সি. সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্টিফেন ডব্লু হকিং বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রহাণুর ধাক্কা এবং জনবিস্ফোরণ থেকে পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে মানবজাতিকে অন্য গ্রহে বসতি স্থাপন করতে হবে। পৃথিবী এবং মানবতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এখনই এই গ্রহ ছেড়ে বেরিয়ে পড়া উচিত। প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্পের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তকে নিন্দা করে বলেন যে, ট্রাম্প পৃথিবীর মৃত্যুকে খাদের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে। এই গ্রহকে শুক্র গ্রহের মত জ্বলন্ত বাড়িতে পরিণত করেছে। সেখানে ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও সালফিউরিক অ্যাসিড বৃষ্টি হয়।
কেমব্রিজের বিশিষ্ট অধ্যাপক প্রশ্ন রাখেন হকিংকে, মানুষ কী পারবে তার সমস্যা সমাধান করতে? হতাশা প্রকাশ করতে করতে হকিং-এর বক্তব্য পৃথিবীতে মানুষের উপস্থিতি হাতে গােনা কয়েকটা দিন মাত্র।
আমি ভীত এই ভেবে যে, অভিযােজনের মধ্যে দিয়ে মানুষের জিনােমের মধ্যে ভয়ংকর লােভ ও আগ্রাসন ঢুকে পড়েছে। কোনাে চিহ্নই দেখা যাচ্ছে না সংঘর্ষ কমার। লক্ষ লক্ষ মানুষকে ধ্বংস করার যুদ্ধাস্ত্র এবং সমরপ্রযুক্তির বিকাশ ধ্বংসাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবেই।
আমরা যারা পরিবেশের কথা অত্যন্ত সততার সাথে ভাবি বা কিছু গাছ লাগাই বা গাছ কাটার বিরুদ্ধে অথবা জলাভূমি ভরাট বা নদীরক্ষার লড়াই চালাই তারা সেই কাজ করেই সন্তুষ্ট ও দারুণ খুশি। কিন্তু বর্তমানে আপনার এই কাজ রাষ্ট্রনায়কদের বিরুদ্ধে যারা পৃথিবীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করছেন তাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের দায়িত্ব নিতে হবে পরিবেশকর্মীদের। আমার জানা নেই এর পরেও এই গ্রহের অস্তিত্ব আর কতদিন? ইতিমধ্যে মহাকাশ বিজ্ঞানীগণ মঙ্গলগ্রহে মানুষের বসবাসের ব্যবস্থার ব্যাপারে গভীর মনােনিবেশ করেছেন। মঙ্গল-অভিযানের ব্যাপারে পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞানী বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করছেন। একই দিনে মেক্সিকোতে প্রবল ভূমিকম্প আর মুম্বাই এয়ারপাের্টের রানওয়েতে প্লেন ডুবে যাওয়ার মতাে ঘটনা আমাদেরকে ভাবায়।
বিবর্তন ভট্টাচার্য