টুথব্রাশ (Toothbrush) হল দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার রাখার এক যন্ত্র বিশেষ। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই হাতে ব্রাশ এবং রাত্রে ঘুম ঘুম চোখে হাতে সেই ব্রাশ। আমরা দাঁত ব্রাশ করি সতেজ ও আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্যও বটে। মন্দ নিঃশ্বাসের থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য।
সর্বোপরি একটি সুন্দর হাসি হাসবার জন্য নয় কি? দাঁত ব্রাশ করার কাজ ও উদ্দেশ্য হল দাঁতে প্লাক জমায়
বাধাদান। দাঁতের খাঁজে আটকে থাকা খাদ্যাংশকে জমা থেকে মুক্ত করা ও দাঁত সংলগ্ন মাড়িকে রক্ষা করা।

বিজ্ঞানীরা ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়েছেন দাঁতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পদ্ধতির দিকে। দাঁতকে ঘষে মেজে পরিষ্কার রাখার জন্য নানা ভেষজ দিয়ে তৈরি হয়েছে নানা পাউডার। প্রথম দিকে দাঁত মাজার
জন্য উননের ছাইও ব্যবহার করা হত। নিমের ডাল, বকুলের ডাল প্রভৃতি চিবিয়ে ব্রাশের মতাে করে ব্যবহার করা হত। তাতে ব্রাশ ও পেস্টের, উভয় কাজ একসঙ্গে চলে যেত। প্রবাদ আছে- আম জাম নিমের ডালে / দাঁত মাজিও কুতুহলে। মাজনের পর টুথব্রাশ ওমটুথপেস্ট এসেছে, দাঁত পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে নানা পরীক্ষা আজও চলছে। ব্রাশ ও পেস্টের গুণগত মান বাড়ানাের জন্য দন্ত মার্জনার দ্বারা দাঁত পরিষ্কার থাকে। অপরিষ্কার দাঁতে ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতিতে প্লাক তৈরি হয়। কেরিস ও মাড়ির প্রদাহ (gingivitis) হয়। ক্রমশ পেরিওডন্টটাইটিসের (মাড়ির প্রদাহ) উৎপত্তি ঘটে। ফলে পেরিওডন্টাল লিগামেন্টের ক্ষতি হয়ে থাকে। অ্যালভিওলার হাড়ে ও মুখের অন্যান্য অংশে রােগ তৈরি হয়। প্লাক জমে জমে চমৎকার এক শক্ত স্তর দাঁতের ওপর জমে (চমের ক্ষেত্রে অবশ্য এমন ঘটে না)। সুতরাং নিয়মিত যারা সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করে তাদের পক্ষে দাঁতের নানারকম সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। নিয়মমাফিক ব্রাশ না করতে পারলে ফললাভ সম্ভব নয়। ফলপ্রসূ দাঁত ব্রাশ করা নির্ভর করে অভিপ্রায়, জ্ঞান ও হাতের যান্ত্রিক নৈপুণ্য বা পটুতার উপর। আর অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ হল উপযুক্ত টুথব্রাশ।প্রথমে পশুলােম দিয়ে ব্রাশ তৈরি করা হয়েছিল চিন দেশে পঞ্চদশ শতকে। ব্রাশে কাটা বা কুচিগুলি সাইবেরিয়ান বরাহের ঘাড়ের কেশ নিয়ে গরু বা মােযের হাড়কে হ্যান্ডেল বানিয়ে তার মধ্যে খােদিত করে ওই কেশগুলি ন্যস্ত করা হত।
/https://public-media.si-cdn.com/filer/b9/01/b9016719-a5a0-49fb-9762-8e04ad7d9c61/napoleons_toothbrush_c_1795_9660576547.jpg?w=640&ssl=1)
/https://public-media.si-cdn.com/filer/b9/01/b9016719-a5a0-49fb-9762-8e04ad7d9c61/napoleons_toothbrush_c_1795_9660576547.jpg?w=640&ssl=1)
/https://public-media.si-cdn.com/filer/b9/01/b9016719-a5a0-49fb-9762-8e04ad7d9c61/napoleons_toothbrush_c_1795_9660576547.jpg?w=640&ssl=1)
আমেরিকা প্রথম এই রকম ব্রাশের পেটেন্ট গ্রহণ করে ১৮৫৭ সালে। ১৯৩৭-এ বরাহের কেশের (bristle tooth brush) পরিবর্তে নাইলনের ব্যবহার শুরু হয়। আজ বহু রকমের কার্যকরী ব্রাশ তৈরি হয়েছে এবং পাওয়া যায় দাঁত ব্রাশ করার জন্য। এই ব্রাশের মাথার দিকের আকার ডিম্বাকার, উপবৃত্তাকার বা গােলাকার অংশের মধ্যে সজ্জিত থাকে বাঁকাভাবে আন্দোলিত নাইলন গুচ্ছ যার হ্যান্ডেলটি নমনীয় হয়। নানারঙের ও বিশেষ বিশেষ মাপের ব্রাশ দেখা যায়। নাইলনের গুচ্ছও শক্ত, মাঝারি ও নরম ধরনের হয়। তবে কোন টুথব্রাশই দাবী করতে পারে না, সেই ব্রাশই শ্রেষ্ঠ;বেশির ভাগ সময়ে এটা নির্ভর করে ব্রাশ করার পদ্ধতির ওপর। ব্রাশের ডিজাইন অতটা বিবেচ্য নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল ব্রাশের প্লাক দূর করার গুণমানের ওপর। ব্রাশ নির্বাচন করা যা নির্ভর করে প্রত্যেকের নিজের রুচি ও সুবিধার ওপর। জানা দরকার কখন কীভাবে দাঁত মাজতে হবে।।



হাতের সাহায্যে মাজার ব্রাশটির মাথা হবে ২৫.৪ মিমি থেকে ৩১.৮ মিমি লম্বা আর প্রস্থ হবে ৭.৯ মিমি থেকে ৯.৫ মিমি চওড়া। সামনের চওড়া অংশে তিন থেকে চারটি সারি আর অপরদিকে পাঁচ থেকে
বারােটি সারিতে নাইলনের গুছ থাকে। ব্রাশ করার অন্যতম কার্যকরীপদ্ধতি হচ্ছে মৃদুভাবে (Bass technique) ব্রাশ করা। বাস পদ্ধতি ব্যতীত আরও কয়েকটি পদ্ধতির উল্লেখ করা যেতে পারে। স্টিলম্যান্স পদ্ধতি (Stillman’s method)- এই টেকনিকে আস্তে আস্তে মালিশের মতাে ব্রাশ করলে উদ্দীপনা তৈরি হয় এবং এর ফলে দাঁতের সার্বিক পরিচ্ছন্নতা লাভ হয়। ফোনেস পদ্ধতিতে (Fone’s Method) হালকা
চাপ প্রয়ােগে চক্রাকারে ম্যাক্সিলারি জিনজাইভা থেকে ম্যান্ডিবুলার জিনজাইভা পর্যন্ত ব্রাশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লিওনার্ড পদ্ধতিতে(Leonard’s method) আনুভূমিকভাবে ওপর থেকে নীচে এবং নীচে
থেকে ওপরে। এইভাবে ব্রাশ চালনা করে দাত মাজা হয়ে থাকে এছাড়া এই পদ্ধতির কোন দুটি বা তিনটি বিভিন্নভাবে একত্রিত করেও দাঁত মাজার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্রাশ করবার আদর্শ সময় হচ্ছে রাত্রে বিছানায় শুতে যাবার আগে। কারণ ঘুমের সময় মুখগহরে লালাক্ষরণ হ্রাস পায়, মুখবিবরস্থিত ব্যাকটিরিয়া খুব সহজে শর্করার সঙ্গে বিক্রিয়ায় প্রস্তুত অম্নের দ্বারা দাঁতে হানি ঘটায়।



নানাধরনের পাওয়ার্ড (Powered) বা ইলেকট্রিক্যাল (Electrical)ব্রাশের অন্তর্ভুক্তি এক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। বাণিজ্যিকভাবে এটি বাজারে আসে ১৯৬০ সালে। এই ব্রাশ হাতে ধরে ব্রাশ করার বিকল্প
হিসাবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, রােগী বা হাতের দুর্বলতাসম্পন্ন মানুষের জন্য। ইদানীং পাওয়ার্ড ব্রাশের ব্যবহারের সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। দাঁতের প্লাক দূর করার জন্য পাওয়ার্ড টুথব্রাশের সঙ্গে দাঁতের
যান্ত্রিক সংযােগ নির্ভর করে।অনেক ধরনের ইলেকট্রিক্যাল ব্রাশ আজকাল বাজারে সহজলভ্য। এটা দুপিঠেই কাজ করে। বৃত্তাকার গতিতে কাজ করে। পর্যায়ক্রমিক বিপরীত দিকে, গােলভাবে নড়াচড়া
করতে পারে। এমনকি নিম্নহারের শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি করে,এই চলমান স্পন্দন দাঁতের ওপরের ব্যাকটিরিয়া প্লাকের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধায়। এই ব্রাশগুলি আশীর্বাদস্বরূপ কারণ অনেকেই অতি উৎসাহী হয়ে জোরে ব্রাশ করে দাঁতের ক্ষতি করে ফেলে। অপরপক্ষে পাওয়ার্ড ব্রাশ কৌণিক লম্বা, ছােটমাথা পিছন দিক খুব ভালাে পরিষ্কার করতে সক্ষম। তাছাড়া ব্রাশের হালকা আঘাত যা দাঁতের প্লাককে উপযুক্তভাবে দূর করতে পারে। কখনও কখনও এই ব্রাশে টাইমার লাগানাে থাকে। এই সিগন্যাল বা সংকেতরশ্মি ২-৩ মিনিটের মত কম সময়ে দাঁত পরিষ্কার করে। এর দ্বারা দাঁত মাজার সময়কে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এটি একটি সম্পূর্ণ হাইটেক অভিজ্ঞতা।



ড. সতী চক্রবর্তী