আমাদের রাজ্যের ৮০ শতাংশ ডিম আসে চরে খাওয়া বা মুক্তাঙ্গন পদ্ধতিতে পালিত মুরগি থেকে। আর এই ধরনের পালিত মুরগির একটি ভয়ানক রােগ হল ‘ফাউল পক্স বা গুটি বসন্ত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রােগের প্রচলিত টিকা কার্যকর হয় না। তাই মুরগির গুটি বসন্তের টিকার মান আরও উন্নত কিভাবে করা যায়, তার প্রয়াস চলছিল বহুদিন যাবৎ। সম্প্রতি মুরগির গুটি বসন্ত প্রতিরােধে উন্নতমানের টিকা তৈরির দিশা দেখালেন বাংলার একদল গবেষক।
বেলগাছিয়ায় অবস্থিত রাজ্যের প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়ােলজী বিভাগের ছয় গবেষক এই কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন। তাদের করা গবেষণার ফলাফল ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে অ্যাভিয়ান ডিজিজ’ নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত একটি বিখ্যাত জার্নালে। এঁরা টি-লিম্ফোসাইট ভিত্তিক টিকা তৈরির অ্যান্টিজেন শনাক্ত করতে পেরেছেন, যা রীতিমত একটি কঠিন কাজ।বিভিন্ন সংক্রামক রােগের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে আমরা
টিকা ব্যবহার করি। টিকার মাধ্যমে বিভিন্ন রােগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের প্রতিরূপ বা ‘ড্যামি’ ব্যবহার করা হয়। এরা পরিভাষায় অ্যান্টিজেনিক বস্তু। এরা আমাদের দেহজ প্রতিরক্ষাতন্ত্র বা ইমিউন সিস্টেম’-কে চাঙ্গা করে তােলে, যাতে আমাদের শরীর পরবর্তীকালে আসল জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়লাভ করতে পারে। আমাদের শরীরে ঢুকে পড়া জীবাণুর আক্রমণ থেকে বাঁচাতে দুধরনের লিম্ফোসাইট কোষ
বিশেষ ভূমিকা নেয়—‘বি’ ও ‘টি লিম্ফোসাইট। আমরা যে সমস্ত টিকা ব্যবহার করি, তারা ‘বি’ লিম্ফোসাইটকে উদ্দীপ্ত করে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা জীবাণু ধ্বংস করতে সক্ষম।
কিন্তু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস যখন কোষের মধ্যে ঢুকে পড়ে তখন আর অ্যান্টিবডি কাজে আসে না। তখন প্রয়ােজন হয় আক্রান্ত কোষ ধ্বংসকারী কিছু টি’ লিম্ফোসাইটের, যারা ‘পারফোরিন ও ‘গ্র্যাঞ্জাইম’-নামক দুটো প্রােটিন যৌগের সাহায্যে শরীরের আক্রান্ত কোষকে মেরে ফেলে। টি-লিম্ফোসাইট উদ্দীপক টিকা’ অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে এই ধরনের টি-লিম্ফোসাইটকে উজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। তার জন্য দরকার উপযুক্ত কিছু অ্যান্টিজেনকে খুঁজে পাওয়া। গবেষক দলটি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই দুরূহ কাজটিই করেছেন। খুঁজে পেয়েছেন টি-লিম্ফোসাইট-এর ‘টার্গেট’ অ্যান্টিজেন, যা ফাউল পক্স প্রতিরােধে অভিনব টি-লিম্ফোসাইট ভিত্তিক টিকা তৈরিতে ভীষণভাবে কাজে লাগবে। টি-কোষ ভিত্তিক টিকা উৎপাদনের অভিনব এই প্রয়াস মানুষের বিভিন্ন ভাইরাস ঘটিত টিকা তৈরির প্রচেষ্টাকে যে উৎসাহিত
করবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সিদ্ধার্থ জোয়ারদার
One thought on “টি সেল ভ্যাকসিন”