বেশ কিছুদিন থেকে সোলার এ্যক্টিভিটি বা সূর্যের সক্রিয়তা নিয়ে খোঁজ খবর করছিলাম। স্বভাবতই সূর্যের তাপশক্তির উৎস, চৌম্বক ক্ষেত্র, সৌর কলঙ্ক, বিভিন্ন ধরণের বিকিরণ ইত্যাদি বিষয়ে কিছু পড়াশোনা করতে হচ্ছিল। এই পড়াশোনা করতে গিয়ে তিমিদের চলাচল ইত্যাদি নিয়ে একটি গবেষণা পত্রের কথা জানা গেল যা পরিবেশ কর্মীদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।আজ সেই বিষয় নিয়েই লিখছি।
আমরা সবাই জানি যে সমুদ্রের গভীরে বেশ কয়েকটি প্রজাতির তিমি বাস করে। তাদের একটি প্রজাতি হল গ্রে হোয়েল বা ধূসর তিমি। যেহেতু জলজ জীব তাই আমরা তিমিকে মাছ বলি। আসলে তিমি বিশাল আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী বা ম্যামেল। তারা ডিম পাড়ে না তাদের বাচ্চা হয়। গ্রে হোয়েল প্রজাতির তিমিদের নিয়ে পরিবেশ কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।
তার কারণ এই প্রজাতির তিমিদের মধ্যে মাঝে মাঝেই সমুদ্র উপকূলে চলে আসার প্রবনতা রয়েছে। শুধু তাই নয় তারা বালুকা বেলায় আটকে থাকে । সমুদ্রের গভীরে ফিরে যেতে পারেনা। বিষয়টি আমাদের কাছে বেশ মজাদার কারণ তারা অসুস্থ নয়, শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন থাকে না। ঠিক যেন কোন দিশেহারা নাবিক পথ হারিয়ে চলে এসেছে কোন অজানা দ্বীপে। অন্য পরিবেশে।পরিবেশ কর্মী ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় বহু চেষ্টায় এই সব আটকে পড়া তিমিদের সমুদ্রের গভীরে ফেরত পাঠান হয় । তার পর তারা আবার তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ফিরে পায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিমিদের মরে যেতেও দেখা যায়।
জীব বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন থেকেই মনে করেন তিমিদের শরীরের কোথাও একটি করে কম্পাস আছে যার সাহায্যে তারা দিক নির্ণয় করে ও চৌম্বক ক্ষেত্রের সাহায্যে সমুদ্রের গভীরে চলাচল করে ঠিক যেমন করে পাখি ও মৌমাছি আকাশে উড়ে। সুতরাং সূর্য থেকে আসা তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ তিমিদের চলাচল অনেকটাই নিয়ন্ত্রন করে। বহুদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা তিমিদের পথ হারিয়ে যাওয়া ও সূর্য থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের বিকিরণ নিয়ে গবেষণা করছিলেন । ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় ও এডলার তারামণ্ডলের একদল বিজ্ঞানী তাদের গবেষণায় তিমিদের পথ হারিয়েফেলার রহস্যের খোঁজ পেয়েছেন বলে মনেকরা হচ্ছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে কারেন্ট বায়লজি পত্রিকায় তাদের গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে। তিমিরা কোন কোন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করে সেটা খুব ভালো ভাবে জানা নেই। সাগর মহাসাগরের জলের মধ্যে দৃষ্টি খুব বেশি দূর চলেনা। সুতারাং এটা ধরে নেয়া যায় যে সাগরের নীচে চলাচলকারী প্রাণীরা অন্য কোন সংবেদনশীল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাহায্যে এক জায়গা থেকে অন্য জয়গায় যাতায়াত করে। যেমন চৌম্বক ক্ষেত্রের ব্যবহারের কথা আগে বলা হয়েছে। এটা মনে করা যেতেই পারে যে চৌম্বক ক্ষেত্র পরিবর্তিত হলে কিছু কিছু তিমি দিকভ্রান্ত হয়ে সমুদ্র তটে চলে আসে।
গত শতকের ৮০র দশকের শেষের দিকে দূরদর্শনে কসমস নামে একটি ইংরেজি ধারাবাহিক আমরা দেখেছি। জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক কার্ল সেগাণের লেখা কসমস বইটির উপর ধারাবাহিকটি তৈরি হয়েছে(বইটির একটি কপি আমার সংগ্রহে আছে)। ধারাবাহিকের ভাষ্যকার ছিলেন কার্ল সেগান নিজে। ঐ ধারাবাহিকে তিমিদের মধ্যে ভাব আদান প্রদান কীভাবে হয় বা তিমিরা স্থানান্তরে যাওয়ার জন্য যে নেভিগেশন ব্যবস্থা ব্যবহার করে সেটা বলেছেন কার্ল সেগান নিজে ভাষ্যকার রূপে।
যেহেতু ধূসর তিমি উপকূল বরাবর স্থানান্তরে যায় তাই তারা একে অপরের সাথে যে ফ্রিকুয়েন্সিতে যোগাযোগ করে তা সামান্য ব্যহত হয় তাহলেই তারা দিকভ্রান্ত হয়ে উপকূলে চলে আসতে পারে। সাধারণত আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল ভাগেই ধূসর তিমিদের আটকে পড়তে দেখা যায়।
অজয় নাথ