ক্ষমতা (power) পরিমাপের একক হিসেবে ‘হর্স পাওয়ার’ কথাটার সঙ্গে সকলেই পরিচিত।
ক্ষমতা মাপার ব্যাপারে এত প্রাণীর মধ্যে ঘােড়াকেই কেন বেছে নেওয়া হয়েছিল তা সাধারণ বুদ্ধিতে বােঝা যায় না।ধন্দ দূর করতে হলে প্রযুক্তির ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে হবে এবং এটা করলে যে তথ্য উঠে আসবে তা শুধু যে কৌতুহলপ্রদ তাই নয়, রীতিমতাে আশ্চর্যজনকও!
আসলে, ইঞ্জিনের ক্ষমতা মাপার দায়িত্ব ঘােড়া পেয়েছিল স্রেফ বিক্রিবাটার খাতিরে! বিপণনের চাপ না থাকলে ক্ষমতার মাপকাঠি হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসত অন্য কোনাে একক। ঘােড়ার সাথে ক্ষমতা মাপার একক কিভাবে জড়িয়ে পড়ল যে আশ্চর্য কাহিনি এবার সংক্ষেপে তা বলা যাক।
সময়ের স্রোত উজিয়ে পেছিয়ে যেতে হবে প্রায় আড়াইশাে বছর।স্কট প্রযুক্তিবিদ জেমস ওয়াট (1736-1819) ও ইংরেজ যন্ত্রপাত নির্মাতা ম্যাথু বােলটন (1728-1809) যুগ্মভাগে 1775 খ্রিস্টাব্দে
একটি বাষ্পীয় ইঞ্জিন (Steam Engine) তৈরির কারখানা স্থাপন করেছেন। বিভিন্ন ক্ষমতার বাষ্পীয় ইঞ্জিন উৎপাদিতও হচ্ছে। কিন্তু বিক্রিবাটা নিতান্তই কম।
প্রশ্ন উঠবে, বাষ্পীয় ইঞ্জিনের মতাে একটি দরকারি জিনিসের বেচাকেনা কেন কম। আসলে গােল বাধছে একটা ব্যাপারে। ক্ষমতা মাপার কোনও মাপকাঠি তখনও পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। কোন কাজ সম্পাদন করতে কত ক্ষমতা দরকার সেই সময়ে সেটা প্রকাশ করা হত ঘােড়ার সংখ্যা দিয়ে।ইঞ্জিন বেচতে গিয়ে ওয়াট পড়তেন মহা সমস্যায়। ক্রেতারা জানতে চাইত ক’টা ঘােড়ার কাজ করতে পারবে ইঞ্জিনটি।
উত্তর জানা না থাকায় ওয়াট চুপ করে থাকতেন। বেশির ভাগ ক্রেতাই ফিরে যেত ইঞ্জিন না কিনেই। অজ্ঞাত ক্ষমতার ইঞ্জিনের থেকে জানা ক্ষমতার ঘােড়া যে অনেক বেশি ভরসার!
চৌকস ওয়াট বুঝতে পারলেন, জমিয়ে ব্যবসা করতে হলে বিভিন্ন মডেলের ইঞ্জিনগুলি কত ঘােড়ার সমতুল ক্ষমতাসম্পন্ন সেটা নির্ণয় করতেই হবে। প্রযুক্তিবিদ ওয়াট জানতেন, কাজ করার হারই হচ্ছে ক্ষমতা। কাজেই একটা ঘােড়া কী হারে কাজ করতে পারে সেটা মেপে ফেলতে পারলেই ঘােড়ার ক্ষমতা কত তা জানা সম্ভব হবে। অতঃপর একটা ঘােড়া যােগাড় করে ঠিক এই কাজটাই করে ফেললেন ওয়াট।
আর এভাবেই ক্ষমতার একক হর্স পাওয়ার’-এর প্রচলন হল।
জেমস ওয়াটের অবদানের স্বীকৃতিতে ক্ষমতার আন্তর্জাতিক এককের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়াট’। এক হর্স পাওয়ার প্রায় সাড়ে সাতশাে ওয়াটের সমান।
সুজিত কুমার নাহা।