আয় ঘুম যায় ঘুম দত্তপাড়া দিয়ে… দত্তপাড়া দিয়ে আসুক ছাই না আসুক,মানষ ঘুম পেলে ঘুমােয়। কুম্ভকর্ণের তাে যাবতীয় সুনাম বা জনপ্রিয়তা ওই ঘুমের জোরেই। ঘােড়া যে ঘােড়া, সেও পছন্দের শােওয়ার জায়গা না পেলে দিব্যি দড়িয়েই ঘুমিয়ে নেয়। হাতিও তাই। কিন্তু মাছেরা কি ঘুমের দেশ থেকে বহিষ্কৃত?
ওদের অভিধানে কি ঘুম শব্দটাই নেই! কেউ মাছেদের ঘুমােতে দেখেছেন?যাদের বাড়িতে অ্যাকোয়ারিয়াম আছে, তারাও এ দাবি করতে পারবে না যে,তারা দেখেছে, মাছেরা নিচে ছড়ানাে বালির ওপর হাত-পা, থুড়ি পাখনা ছড়িয়েঅঘােরে ঘুমােচ্ছে! তাহলে মাছেরা কি উদয়াস্ত জেগেই কাটায়?
এককথায় উত্তর— না,
মাছেরও ঘুমােয়। আর সেটা বেশ কায়দা করেই।আমরা ঘুমােই চোখের পাতা বুজিয়ে। যেহেতু আমাদের মতাে ওদের চোখের পাতা নেই, তাই সেটা বন্ধ করার প্রশ্নও নেই। যখন দেখছি মাছ চোখ খুলে জেগে, তখন হয়ত সে দিব্যি নাকডাকিয়ে ঘুমােচ্ছে! ফের প্রশ্ন জাগবে— ঘুমােলে পাখনা নড়ে কী করে! আর ঘুমের ঘােরে ভাসতে ভাসতে নিচে তাে পড়ে যায় না!
মাছেদের চোখের ওপর একটা স্বচ্ছ পর্দা থাকে। সুতরাং চোখে জলের ঝাপ্টা দিয়ে তাদের ঘুম ভাঙাবার চেষ্টা করে কোনাে লাভ নেই। ওরা জলে থাকে অগত্যা ভাসতে ভাসতেই ঘুমনাে রপ্ত করে নেয়। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও অবশ্য পাখনা নেড়ে ভেসে থাকার ব্যবস্থাটা চালু রাখে। কোনাে কোনাে মাছ বালি সরিয়ে গর্ত
করে হাত-পা ছড়িয়ে তার মধ্যে শুয়ে রাতের ঘুমটা সেরে নেয় না যে তা নয়।
ভােরবেলা বহু শিশুকে দেখা যায়, মায়ের ধরে ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে স্কুলের উদ্যেশে চলেছে।
ঠিক একইভাবে ঘুমসাঁতার দেয় বেশ কিছু বাসিন্দা।কয়েক জাতের হাঙর আছে যারা ঘুমন্ত অবস্থায় সমুদ্রে দিব্যি সাঁতরে চলে। মানুষও অবশ্য অনেক সময় রাতে ঘুমের ঘরে হেটে-চলে বেড়ায়।মনােবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘স্বপ্নচারিতা’ বা ‘সমনামবুলিজম’।অজ্ঞ, কুসংস্কারগ্রস্ত লােকের সাতপাঁচ না-জেনে বলে নিশিতে পেয়েছে।মাছেদের রাজ্যে না আছে ঘরদোর,না দরজা,জানলা। তাই খিলছিটকিনি এঁটে ঘুমােবার প্রথাও নেই।ঘুমন্ত একজনকে চাইলে আর একজন সহজেই ঘাড় মটকাতে মায় সাবাড় করতে পারে।তাই তাদের ঘুমের মধ্যেও সতর্ক থাকতে হয়।রাসেস (wrasses) বলে এক ধরনের মাছ আছে যাদের শরীর থেকে এক ধরনের রস বেরিয়ে গােটা শরীরটাকে একটা চাদরের মতাে ঢেকে ফেলে।
সমীরকুমার ঘোষ