বিজ্ঞানীরা বলেন জনস্বাস্থ্যের বড় শত্রু হল মােবাইল ব্যবহার।
বর্তমান নিয়মে, একটি এলাকায় ২০ শতাংশের বেশি ও একটি নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের ব্যান্ডে ৫০ শতাংশের বেশি স্পেকট্রাম হাতে রাখতে পারে না কোনাে সংস্থা।
এখন প্রশ্ন হল কি এই স্পেকট্রাম? লেখা, কথা বা ছবি ডিজিটাল সংকেত হিসেবে যাতায়াত করে কিছু বিশেষ কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে। এই ফ্রিকোয়েন্সি বা কম্পাঙ্কগুলির সমাহার বা গুচ্ছকে স্পেকট্রাম বলে। সহজ করে বললে, রাস্তা দিয়ে যেমন গাড়ি চলে, স্পেকট্রাম দিয়ে তেমনই মােবাইল সিগন্যাল যাতায়াত করে।
এখন বিষয়টি হল- মােবাইল পরিষেবা আজ আধুনিক সমাজে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এতে জনস্বাস্থ্য কতখানি বিঘ্নিত এ বিষয়েই একটু আলােকপাত করা যাক। ইটালির বিজ্ঞানী ম্যারিনিলি (Marinelli)
একটি আন্তর্জাতিক কর্মশালায় বলেছিলেন তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের ফলে ডি. এন. এ.-র মধ্যে জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে মিউটেশন (Mutation) ঘটে। ডঃ ডেভিড পামরে (David Pamerai)মলিকুলার বায়ােলজিস্ট এবং টক্সোকোলজিস্ট, হটিনহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যারিনিলির বক্তব্য সমর্থন করেন এবং বলেন- মােবাইল ফোন পরােক্ষভাবে ডি. এন. এ.-কে নষ্ট করে। কোষের মধ্যে ডি. এন. এ.-র মেরামত ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে। ফলে তার কাজের ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ হারায়। প্রােটিন তৈরির সংকেত ডি এন এ-র মধ্যে থাকে। প্রােটিন উপাদান দুটি নির্দিষ্ট ধাপ বিশিষ্ট। প্রথম ধাপে
ট্রান্সক্রিপশন পদ্ধতির মাধ্যমে ডি, এন, এ.-র সংকেত এম, আর, এন,এতে স্থানান্তরিত হয়। দ্বিতীয় ধাপে ট্রান্সলােকেশান প্রক্রিয়ায় এম-আর-এন-এর সংকেত অনুসারে প্রােটিন গঠিত হয়।
তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণে প্রােটিন সংশ্লেষে বাধা পড়ে। এছাড়া ম্যারিনিলি বলেন ক্ষতিগ্রস্থ ডি এন এ-গুলি ২৪ ঘণ্টা ধরে তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্রের এক্তিয়ারে থাকলে লিউকেমিয়া কোশে পরিণত হয়।
এই রােগকে ব্লাড ক্যানসার হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়। এক্ষেত্রে শ্বেতরক্ত কণিকা (WBC) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায় এবং রক্তে অপরিণত শ্বেতরক্ত কণিকার জন্ম হয়। এই রােগটি শিশু এবং নারীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। এই রােগে রক্তশূন্যতা, প্লীহার বৃদ্ধি, বিভিন্ন গ্রন্থির বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়।রক্তের নরমােক্লাস্ট কোশ পাওয়া যায়। অর্থাৎ নিউক্লিয়াস যুক্ত অপরিণত লােহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়ে। এর ফলে যেতরক্ত কনিকার আর দেহ সৈনিকের ভূমিকা পালন করতে পারে না।
এক কথায় দেহে প্রতিরােধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। এই অবস্থায় দেহটি জীবাণুর নিরাপদ আশ্রয়
হয়ে ওঠে।মেডিসিনের বিখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন-১৯৯২ সালে ডেভিড বেনার্ড নামে এক ভদ্রলােক তার স্ত্রীর প্রাণঘাতি মস্তিষ্ক ক্যানসারের জন্য মােবাইল ফোনকে দায়ি করে ফ্লোরিডার এক
আদালতে একটি মামলা রুজু করেছিলেন। যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে মামলা খারিজ হলেও আশঙ্কাটি মরেনি।ডাঃ চট্টোপাধ্যায় বলেন- মােবাইল ফোন থেকে মাথার যে অংশের তাপমাত্রা বাড়ে, মস্তিষ্কের রক্ত পরিবহনের মাত্রা বাড়িয়ে সেই বর্ধিত তাপমাত্রাকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। কিন্তু চোখের
কর্নিয়ার সে ক্ষমতা নেই। তাই মােবাইল ফোনের বিকিরণজনিত কারণে চোখে তাড়াতাড়ি ছানিপড়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের দেশের মােবাইল ফোনে ব্যবহৃত ৯০০ মেগাহাইট (MHz) কম্পাঙ্কের ভেদ
ক্ষমতা খুবই কম। এই কম্পাঙ্ক শরীরের কোশ বা কলায় ১ সেন্টিমিটার ভেদ করতে পারে মাত্র। কম্পাঙ্ক যত বাড়ে, ভেদ করার শক্তি তত কমতে থাকে। এই কম্পাঙ্ক বা শক্তির ব্যবহারে কোশের মধ্যে জিনের
নিয়ামক ডি, এন, এ, -র ক্ষতি হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা। আর ডি এ-এর সুনির্দিষ্ট কিছু অপগঠন থেকেই ক্যানসারের জন্ম।
মিনিট টানা ৯০০ মেগাহার্জ (জি.এস.এম) মােবাইলে কথা বললে সমপরিমাণ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বিচ্ছরণে (২ ওয়াট) রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। আরও কয়েকটি ক্ষতি হয়, তা হল- পেসমেকার হঠাৎ বন্ধ
হয়ে যাওয়া, হার্টবিট কমে যাওয়া। নাক-কান-গলার ডাক্তার কৌশিক দাস বলেন- এক নাগাড়ে মােবাইল ফোনে কথা বললে কানে ও মাথার একদিকে এবং ঘাড়ে ব্যথা করে, একাগ্রতা ও মনঃসংযােগ নষ্ট হয়ে যায়। মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এছাড়াও টিটিএস বা টেম্পােরারি গ্রেসহােল্ড শিফট নামক একধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে সাময়িক ভাবে শ্রবণ শক্তি কিছুটা কমে যায়।
অজয় মজুমদার