জ্যোতিষশাস্ত্রে ভুত ভবিষ্যত আগাম বলে দেওয়ার বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি চল হস্তরেখা বিচার। আমরা হাতের তালু দেখলে তাতে অসংখ্য রেখা দেখতে পাব।হাতের তালুতে দুরকম রেখা থাকে। একরকম মােটা রেখা বা ভজ (Crease) আর একরকম খুব সরু রেখা (Ridge) মােটা রেখাগুলি জ্যোতিষশাদরে হৃদয়রেখা, মস্তকরেখা, আয়ুরেখা, ভাগ্যরেখা, স্বাস্থ্যরেখা ইত্যাদি নির্দেশ করে।
হাতে রেখা না হলে কি হত না? হাতে রেখা হয় কি ভাবে? হাতে রেখা হবে এবং এটা মানুষের অন্যান্য অঙ্গ তৈরীর মতই ব্যাপার। মাতৃগর্ডে ভ্রণের দেহ থেকে হাত তৈরী হওয়ার পর হাতের তালু থাকে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায়, তখন তালুর বড় হাড় ও আঙুলের ছােট ছােট হাড়েদের দরুন হাড়গুলির সংযােগ বরাবর ভাঁজ পড়ে। আস্তে আস্তে হাত মুঠো করলে দেখা যাবে মােটা রেখা বরাবর হাত ভাঁজ হচ্ছে।
এই রেখাগুলি ছাড়াও হাতে কিছু কিছু স্ফীত অংশ আছে, হাতের তালুতে প্রতিটি আঙুলের নীচে।জ্যোতিষীরা বলে এই স্ফীত অংশগুলি গ্রহের নামাঙ্কিত জায়গা। যেমন বুড়াে আঙুলের নীচে গুক্রের জায়গা, তর্জনীর নীচে বৃহস্পতি, মধ্যমার নীচে শনি, অনামিকার নীচে রবি, এইভাবে হাতের স্ফীত জায়গাগুলি বিভিন্ন গ্রহের প্রভাব নির্দেশ করে জ্যোতিষশাস্ত্রে।
হাত দেখে জ্যোতিবীরা বলে দিতে পারেন, আপনার শনি বা অন্য কোন গ্রহ অধঃ না উর্ধ্ব। এবার জানা যাক গ্রহগুলির জায়গায় তালুতে কি থাকে। বুড়াে আঙুলের নীচে যেখানে শুক্রের জায়গা সেখানে আসলে Adductor, Flexor পেশীগুলির অবস্থান। এছাড়া জ্যোতিষীদের বৃহস্পতি, শনি, রবি ইত্যাদি গ্রহগুলির জায়গায় আঙুলগুলির পেশীগুলি আছে।
অর্থাৎ বিভিন্ন পেশীগুলির অবস্থানের জন্যই স্ফীত জায়গাগুলি, অসীম দূরত্বে থাকা গ্রহগুলির কোন প্রভাব নেই। এইভাবে কোন কারণ ছাড়াই নিয়ম বানিয়ে রেখে আমাদেরকে আশান্বিত করে জ্যোতিষীরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বহুদিন ধরে।
তাহলে বােঝা গেল আমাদের ভবিষ্যৎ বলার জন্য বা আমাদের পরিচয় বহন করার জন্য হাতের রেখা বা পেশী হয় না। হাতের রেখা বা পেশী হওয়টা সম্পূর্ণ শরীরের গঠনগত ব্যাপার। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।
এ প্রসঙ্গে বলা যায় কোন শিশু যদি পঙ্গু হয়ে জন্ম নেয়, তার যদি হাত না থাকে, তবে তার জীবনে কি কিছুই ঘটবে না? যার হাতই নেই তার আয়ু কতক্ষণ? কিন্তু এরকম বহু মানুষ জীবিত আছেন যাদের হাত নেই। এছাড়াও, দূ্ঘটনা বা বিভিন্ন চর্মরােগে অনেকেরই হাতের একাধিক রেখা নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তার আয়ু, ভাগ্য ইত্যাদির পরিবর্তন হয় তাে?
তাহলে হাঁতের রেখা দেখে ভবিষ্যৎবাণী করার পেছনে একটা কারণ আছে, যেটা হল পাথর – ব্যবসা। হাত দেখালেই রেখা বা পেশা দেখে বলা হল “বিপদ আছেন, শনি তঙ্গে, বহস্পতি ডাউন ইত্যাদি”। বলে তাে দিল, এবার কি হবে? তারও প্রতিকার আছে – “আগামী শনিবারের মধ্যে ৭-৮ রতি পান্না বা মণি বা নীলা দাক্ষিণ হতে ধারন করতে হবে। এই ৭-৮ রতি পাথর আপনার থাকা শনিকে ঠান্ডা করবে।

কিন্তু কি ভাবে? রত্নটাতাে রয়েছে আমার হাতের আঙুলে, তাহলে কেমন।করে শনিকে ঠান্ডা করবে? কোন উত্তর নেই জ্যোতিষীদের। তাহলে জ্যোতিষকে বিজ্ঞান বলব কি?
আমরা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলতে পারি দশজন সুস্থ ব্যক্তি যদি কোন জ্যোতিষীকে হাত দেখান, তবে।
দশজনকেই জ্যোতিষী কোন না কোনও পাথর নিতে বলবেন। কারণ এটাই তাদের ব্যবসা।