সময়ের ঘড়িতে ঘড়িয়াল: ঘড়িয়াল বর্তমানে এক বিপন্ন প্রাণী, ইতোমধ্যেই সে তার, স্থান করে নিয়েছে IUCN-এর বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংকলন Red Data Book-এ। প্রাকৃতিক পরিবেশে সমগ্র পৃথিবীতে ২০০টির মতো বুনো ঘড়িয়াল রয়েছে 2011 এর ফেব্রুয়ারীর হিসেবে অনুযায়ী।
বাংলা ভাষা এবং কথ্য বাংলায় কুমির বারংবার এসেছে, যেমন কুমীর কাঁদে না। কুম্ভীরাশ্রু শব্দটি কপট কান্না অর্থে ব্যবহৃত হয়।আবার একাধিক প্রবাদও এসেছে কুমির থেকে যেমন জলে কুমীর ডাঙায় বাঘ,টাকার কুমীর এবং খাল কেটে কুমির আনা ইত্যাদি l
সংস্কৃত “কুম্ভীর” শব্দটি থেকে “কুমীর”-এর উৎপত্তি, হয়ে থাকলেও “কুম্ভ” হয়তো ঘড়িয়ালের নাকের সামনের ঘড়ার ন্যায় অংশ,তাই সে অর্থে কুম্ভীরই হলো ঘড়য়াল।
অ্যালিগেটর, কেইম্যান ও ঘড়িয়াল তিনটিই হল কুমীর সবাই ক্রোকোডিলিয়া বর্গের অন্তর্গত। এই বর্গ-এর সদস্যরাই আর্কোসরিয়াদের একমাত্র জীবিত বংশধর!যার অন্য সদস্য ডাইনোসররা বহুদিন অবলুপ্ত।
ভারতীয় কুমীর মগর নামে,পরিচিত;যার উৎপত্তি খুব সম্ভবত মকর থেকে l হিন্দু মাইথোলজি অনুযায়ী, গঙ্গাদেবীর বাহন হলো মকর যা কুমীরের মত দেখতে পৌরাণিক জীব।
এবার আসি ঘড়িয়ালের কথায়, ঘড়িয়ালকে ইংরেজি তর্জমায় বলা হয় গাভিয়াল যা ঘড়িয়ালের একটি অপভ্রংশ। ঘড়িয়াল নামাঙ্কনের কারণ হলো, কুমিরের এই বিশেষ উপপ্রজাতির সদস্যদের নাক বা তুণ্ড-এর অগ্রভাগ ঘড়ার মত বা কলসির ন্যায়আকৃতি বিশিষ্ট হয়।সাঁতার কাঁটার সময় জলে ভেসে থাকার ফলে,জলস্তরের উপরে ঘড়ার ন্যায় অংশ দেখতে পাওয়া যায় l ওই ভেসে থাকা অবস্থা দেখে আন্দাজ করাই যায়,জলে ঘড়িয়ালের উপস্থিতি । ঘড়িয়াল-এর বৈজ্ঞানিক নাম: Gavialis gangeticus যা হলো বিরল প্রজাতির মিঠাজলের কুমির গোত্রীয় সরীসৃপ।এরা সম্পূর্ণ জলচর,তবে ডাঙায় হেঁটে চলে বেড়াতে পারে। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার আর ভুটানে দেখা যেতো এদের প্রচুর সংখ্যাতেই কিন্তু এখন এদের সংখ্যা ক্রমশঃ হ্রাস পাচ্ছে ; পশ্চিম বাংলাতে এদের প্রচুর পরিমানেই দেখা মিলতো বিশেষ করে গঙ্গায় । গাঙ্গেয় অঞ্চল গুলোতেও ছিলো বাড়বাড়ন্ত স্থানীয় ভাষায় ঘাড়েল, বাইশাল, মেছো কুমির প্রভৃতি নামেও ঘড়িয়াল পরিচিত।
ঘড়িয়ালদের যৌনদ্বিরূপতা দেখা যায়, পুরুষ ও স্ত্রী ঘড়িয়াল পরস্পর পৃথক হয়, পুরুষ ঘড়িয়ালদের ক্ষেত্রে ঘড়ার ন্যায় অগ্রভাগটা স্ত্রী ঘড়িয়াল -এর তুলনায় বেশ কিছুটা বড়ো হয় । যার ফলে খুব সহজেই এদের পাথর্ক্য করা যায় । পুরুষ ঘড়িয়ালের দৈর্ঘ্য সাড়ে ছয় থেকে ছয় মি. এবং স্ত্রী ঘড়িয়ালের দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ মি.পর্যন্ত হয়ে থাকে।নভেম্বর-জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন সম্পন্ন হয়, স্ত্রী ঘড়িয়াল নদীর পাড়ের মাটিতে বা তীরবর্তী এলাকায় গর্তে করে ৩০-৫০টি ডিম পাড়েএবং ডিম গুলি আকার ও আকৃতিতে অনেক বড়। প্রায় ৩ মাস তা দেওয়ার পর ডিম থেকে বাচ্চা হয়।
ঘড়িয়ালদের খাদ্য প্রধানত মাছ তবে এরা খাদ্য হিসেবে ব্যাঙ ও কীটপতঙ্গ এবং অন্য জলচর জীবদের গ্রহণ করতে পারে। খাদ্য ও বাসস্থানের সংকট এবং জল দূষণ তদুপরি চোরা শিকার হলো,এদের বিপদের অন্যতম কারণ যা দিন দিন একের পরে এক প্রজাতিকে অস্তিত্বের সংকটে ঠেলে দিচ্ছে l নির্দিষ্ট করে বলতে লেগে যে কোনো জীবের বন্য পরিবেশে অবলুপ্তির কারণ হলো,এই জাতীয় সব কারণের সম্মিলিত সমাহার,তাই আইন প্রণয়ন নয় কারণ আমাদের দেশে আইন ভঙ্গকারীর সংখ্যা এবং মর্যাদা বেশি । সার্বিক সচেতনতাই এক মাত্র পথ যদিও সে জিনিসও আজ সোনার পাথর বাটি !
সৌভিক রায়