পাখিদের কথা
পাখি কেন হারিয়ে যাচ্ছে?
পাখিরা আকারে ছােট, কথা বলতে পারে না, সেই সুযােগে আমরা তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছি চিরকালের
জন্য এই পৃথিবী থেকে। ভুল বললাম, পাখিরাও কথা বলে। তবে আমাদের মতাে নিষ্ঠুরদের
কাছে তাদের ভাষা জোরালাে নয়। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে রং-বেরং-এর সুন্দর পালকযুক্ত আকাশে উড়ে
বেড়ানাে পাখিগুলাে।
যেকোনও ছােট বড় জলাশয়ের ধারে আগে শামুখ খােল, ডাহুক, কাদাখোচা, কুঁচ বক, সাদাবুক মাছরাঙা,
মাছরাঙা, বিভিন্ন বক, হাড়গিলা ইত্যাদি পাখিদের ঝাক দেখা যেত। কিন্তু এখন এদের দেখা মেলে না।
কেন এরা হারিয়ে যাচ্ছে পাখিরা ?
একটু খোঁজ নেওয়া যাক, হারিয়ে যাওয়ার কারণগুলি :এককথায় উত্তর দেওয়া যায় পাখিরা হারিয়ে যাচ্ছে এদের উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে। বিস্তারিত
কারণগুলি এইরূপ :
(১) বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়া, জঙ্গল,ঝােপ-ঝাড় নিঃশেষ হওয়া এবং পাখি শিকার।
(২) জলাভূমি, জলাশয় (পুকুর, খাল, বিল, বাঁওড়, জলা) বুজিয়ে ফেলা।
(৩) পাখিদের বাসস্থান, নির্জনতার অভাব, প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করা।
(৪) পাখিদের খাদ্যে টান, বট, অশ্বখ, ডুমুর ইত্যাদি গাছ কমে যাওয়া এবং
সাপ, ব্যাঙ, বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ইত্যাদির সংখ্যা কমে যাওয়া।
(৫) চাষবাসে কীটনাশক ব্যবহার,বিভিন্ন সার (রাসায়নিক) ব্যবহার।
(৬) সচেতনতার অভাব, বিভিন্ন সময়ে কারণে-অকারণে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ পাখি মেরে থাকে। এমনিতেই পরিবেশ পরিস্থিতি পাখিদের বিপক্ষে তৈরি হয়েছে। তার উপর অন্যায়ভাবে হত্যালীলা চালাই আমরা।
(৭) পুকুর, জলাশয়,ফল ও সবজি বাগানের উপর জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে।পাখিরা মাছ বা কীট পতঙ্গ খেতে আসলে ওই জালে আটকে মারা যাচ্ছে।



বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন
যদিও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন আছে। ১৯৭২ সালের ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পায়রা,
পাতিকাক ছাড়া ভারতীয় প্রজাতির যেকোনও পাখি ধরা,কেনা,বেচা, বা বন্দী করে রাখা আইনত দণ্ডণীয় অপরাধ।
তাই ভারতীয় পাখি কেনা বা বেচা দুটিই সমান অপরাধ। আইন আছে, পাখিদেরও পরিবেশে প্রয়ােজন
আছে তবুও তারা আজ বিপন্ন। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে এদের ভূমিকা প্রচুর। ছােট ছােট ক্ষতিকর পােকামাকড় যাতে শস্যের ক্ষতি করতে না পারে তার অনেকটাই দেখভাল করে পাখি। আবার শামুক, গুগলী,জলজ পােকা ইত্যাদি খেয়ে বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতেও এদের ভূমিকা প্রচুর। তাই পাখি সংরক্ষণ জীবসম্প্রদায় টিকিয়ে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
লেখাটি বিজ্ঞান অন্বেষক এর বর্ষ ৩, প্রথম সংখ্যা ,জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০০৬ থেকে সংগৃহীত।