মশার জ্বলায় আমরা প্রতিদিনই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠি। মশা মারার কতই না চেষ্টা করি। কয়েল জ্বালাই ।বিষ তেল ,নিম তেল জ্বালাই বা স্প্রে করি, জানলায় নেট লাগাই কিন্তু মশাদের বাগে আর আনতে পারছি কই ?
মশা সে শুধু কামড়ে আমাদের বিরক্ত করে তাই নয়, আমাদের দেশে মশা বাহিত রােগের আক্রমণ প্রতি বছরই ঘটে। মশাবাহিত রোগ বলতে আমি বলছি ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, এনকেফেলাইটিস এইসব রোগের কথা।
আমাদের রাজ্যেও এইসব রোগ প্রতি বছরই আক্রমণ করে আমাদের অনেক সময় মারাও মান অনেক রােগী। আগে দেখা যেত স্ত্রী মশা বদ্ধ নােংরা জলেই ডিম পারত কিন্তু এখন তারা নিজেদের চরিত্র বদলে ফেলেছে (জিনগত পরিবর্তনের ফলে)। তারা পরিষ্কার অল্প শ্রোতযুক্ত হলেও বেশ স্বচ্ছদে ডিম পাড়ছে। তাই তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিও ঘটেই চলেছে।
আমাদেরও তাই মশাদের নিয়ন্ত্রণ করার অন্য কিছু উপায় বার করতে হবে, সে উপায় হবে পরিবেশ বান্ধব। কয়েল বা তেল জ্বালিয়ে বিষ প্রয়োগে মশা মারতে গিয়ে আমরা পরিবেশের ক্ষতিকরি। একই সঙ্গে ক্ষতি হয় আমাদের স্বাস্থ্যেরও। অনেক দেশে এইসৰ বিষাক্ত জিনিস দিয়ে মশা মারা নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এইসব বিষাক্ত জিনিস এখনও বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরাও বাধ্য হয়ে সেগুলাে কিনছি।
সহজ, পরিবেশ বান্ধব, স্বল্প খরচের উপায় কিন্তু আছে আমাদের হাতের কাছেই। দরকার একটু উদ্যোগ ও সদিচ্ছা, আর একটু প্রচারে এমন কতকগুলাে মাছ আছে, যারা মশার লাভা খেতে খুব পছন্দ করে। এই মাছগুলাের কোনাে কোনােটা আমরা আমরা অনেক সময়ে অ্যাকোয়ারিয়ামে রেখে থাকি। আবার কোনােটা হয়ত ততটা পরিচিত নয়।
তবে এই মাছগুলাে নর্দমার জলে ভালই বেঁচে থাকতে পারে। ঐসৰ জলই তাে জাল মশার জন্মস্থান। তাই ঐসব জলে যদি এই মাছগুলাে উদ্যোগ নিয়ে ছাড়া যায়, তবে খুব সহজেই মশার লার্ভা ধ্বংস করা যায়। মাছগুলাের নাম এবার বলি এরা হল তেচোখে, দাঁড়কে, গাপ্পি, গাঙ্গুসিয়া, তেলাপিয়া, খলসে, চাদা, জেব্রা মাছ, গােল্ড ফিশ ইত্যাদি।
এই মাছগুলাের মধ্যে কয়েকটা আছে যা বর্তমানে সংখ্যায় কমে গেছে (যেমন – দাঁড়বে, তেচোখে, খলসে, চাদা)। এদের সহজেই চাষ করা যায়। এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করবে।
মহিলা স্বনির্ভর গােষ্ঠী, যারা মাছ চাষে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বা নিতে চান, তাঁদের দিয়ে এই মাছগুলাে চাষ করানাে যায়। দু’ভাবে এই মাছের বাজার পাবেন তারা। একদিকে রঙিন মাছ হিসাবে (শৌখিন মাছ হিসাবে) এরা বিক্রি হবে। অন্য দিকে পঞ্চায়েত ৰা পৌরসভায় যদি এই মাছ তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে মশার আঁতুড় ঘরগুলাে ছাড়ার ব্যবস্থা করে তাহলে তারাও আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখবেন। আর মাছের সাহায্যে
আমরাও মশার হাত থেকে রক্ষা পাব।
মশা মারার তেল ছড়াতে বা অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে পঞ্চায়েত ও পৌরসভার যা খরচ হয়, তার থেকেই কম খরচে এই ব্যবস্থা করা যাবে। এতে পরিবেশ ও আমাদের স্বাস্থ্য দুই-ই রক্ষা পাবে। আর প্রায় দুষ্প্রাপ্য হতে বসা মাছের প্রজাতিগুলােও রক্ষা পাবে। মশা বাহিত রােগের হাত থেকেও রক্ষা পাব আমরা। ভারতের কয়েকটি রাজ্যে এ ব্যাপারে কাজ চলছে। আমরাও একবার চেষ্টা করে দেখি না।
ড. শতাব্দী দাস
লেখটি বিজ্ঞান অন্বেষক এর জুল্য-আগষ্ট ২০১১ থেকে সংগৃহীত।