কাজু বাদাম বিজ্ঞান সম্মত নামঃ Anacardium occidentale
অন্যনামেঃ বাংলা, হিজলী বাদাম/কাজু বাদাম, ইংরাজিতে Cashew- গুজরাতি, হিন্দি, মারাঠী, পঞ্জাৰী, কাজু, কপুড় গােদাষি মালয়লম -পারাংকিমাওয়া, ওড়িয়া লঙ্কা বাদাম, তামিল মুন্ডিরী, তেলুণ্ড-জিড়িখামিড়ি।
কাজু বাদাম নামকরণ, জন্মস্থান ও বিস্তার
দক্ষিণ আমেরিকা কাজু বাদামের উৎপত্তি স্থান। প্রায় ৪ শতাব্দী আগে পর্তুগিজ নাবিকগণ ব্রাজিল থেকে একে গােয়াতে নিয়ে আসেন। ব্রাজিলের প্রাচীন ভাষায় এ্যাকাজু (ACAJU)। সম্ভবত পর্তুগিজরা ভারতের পশ্চিম উপকূলে প্রথম এর চাষ শুরু করেন। তখনই তারা কজু নামকরণ করেন।
তারপর এর ফ্রেঞ্চ নাম হয় ক্যাসিও। বর্তমানে দক্ষিণ ভারতের সমুদ্র উপকূল অঞ্চল, মধ্যভারত, উড়িষ্যা প্রভৃতি স্থানে বিস্তার লাভ করে। বাংলায় সমুদ্র উপকূলবর্তী বালুময় দিঘার হিজলী অঞ্চলে হয়ত কাজু বাদাম প্রথম লাগানাে হয় তাই একে হিজলী বাদামও বলে।
কাজু বাদাম গাছ পরিচিতি
চিরহরিৎ ৬-১২ মিটার উঁচু গাছটির গুড়ি খাটো বাঁকা ও অসরল। বাকল ফাটা ফাটা হয়। ছাল কাটলে হলদে হলদে আঠা বের হয়। পাতা ৪ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৭-১২ সেমি চওড়া এবং পুরু হয়
শক্ত চামড়ার মত।। আগা কখনও খাজকাটা; প্রায় ১০ জোড়া শিরা থাকে। বোটা ০.৬-১.৩ সেমি। পুষ্পমুকুল ১৫-২৫ সেমি, রােমশ মঞ্চরীপত্র ভল্লাকার, উভয় পাশ উত্তল;ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বােমাবৃত।



কাজু বাদাম ফুল
ফুল গুচ্ছাকার ১২ সেমি ব্যাসযুক্ত। নীলাভলাল দাগযুক্ত হলদে রঙের ফুলবৃতি ৫ অংশযুক্ত ০.৪-০.৫ সেমি। পাপড়ি রৈখিক ৫টি,০.৮- ১.২৫ সেমি। পুংকেশর ৭টি,কখনও কখনও ৭টি। ১ সেমি লম্বা, একটি
অন্যদের চেয়ে বড় থাকে। ফল ৫৮ সেমি লম্বানাশপাতির মত মাংসল। পুষ্পধারের মাথায় ২-৩.৫ সেমি লম্বা বৃক্ষের মত চেহারার ফল থাকে।



ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে গাছে গুচ্ছাকারে লালচে দাগযুক্ত পীতরঙের ফুল শুরু হয় ।মার্চল এপিল মাসে ফল পাকা শুরু হয় এবং মে জুন মাস নাগাদ ফল পাকা শেষ হয়।
বংশবিস্তার
ডিসেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত গাছে ফুল হতে দেখা যায় এবং মার্চ মাস থেকে জুন মাসের মধ্যেই ফল পাকে। বীজ ১ কিলােগ্রামে ১৬৩ টারমত। পরিপক্ক ফল গাছ থেকে পড়লে কুড়িয়ে নিয়ে এসে ফল থেকে বীজ আলাদা করতে হয়। বপনের প্রথম সপ্তাহে অঙ্কুরােদগম শুরু হলেও কাজটি শেষ হতে প্রায় সপ্তাহ সাতেক সময় নেয়। শতকরা ৭০ ভাগের মত বীজ থেকে অঙ্কুরােদগম হয়। এছাড়া এক বছরের পুরাতন চারা কিম্বা তার স্টামা’ করে রােপবনে লাগানাে যেতে পারে। তবে যেহেতু বীজ থেকে উৎপন্ন চারা ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তাই প্রত্যক্ষভাবে বপনের ওপর বেশী জোড় দেওয়া হয়। যে সমস্ত জায়গায় চারা গজায় শুধু সেখানেই চারা কিংবা স্টাম্প’ রােপন করা হয়ে থাকে।
কাজু বাদাম গুনাগুন
সারা পৃথিবীতেই বৃক্ষের আকৃতি বিশিষ্ট ফল বা কাজু বাদামের প্রচুর চাহিদা এবং এর দামও ভাল পাওয়া যায়। মাংসল কমলা-লাল নাশপাতির মত আপেল থেকে একরকম রস পাওয়া যায় তাতে ভিটামিন ‘সি’ এবং মদ্য থাকে। এই মদ্য থেকে তৈরী ফেণী’ নামক মদ তৈরী করা হয় গােয়াতে। উপকূল অঞ্চলে বালিয়ারী পুনরুদ্ধারে এই গাছ সাহায্য করে। এছাড়া এর কাঠ দিয়ে নানা রকম আসবাবপত্র বানানাে যেতেই পারে তবে সেটা গৌণ।
কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও ঔষধিমূল্য
কাজু বাদাম বীজের শক্ত আবরণ থেকে গাঢ় বাদামী রঙের চটচটে এক প্রকার তেল পাওয়া যায়। অতিশয় কটু ক্ষারীয় এই তেলের নাম কার্ডোল। এই তেল চামড়াতে লাগালে ফোস্কা পরে তবে জডুল, পায়ের কড়া এবং দূষিত ক্ষতের চিকিৎসায় একে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও এই গাছের ছাল, মূল, ফল ও বীজের শাস এর আয়ুর্বেদে ব্যবহার রয়েছে হৃদ্দৌর্বল্য, ইন্দ্রিদৌর্বল্যে মস্তিষ্কের দৌর্বল্যে এবং অপুষ্ঠির ক্ষেত্রে।
শ্রী প্রনবেশ কুমার চৌধুরী
আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাব,
জলপাইগুড়ি
সূত্র নির্দেশঃ
১) চিরঞ্জীব বনৌষধি-আকুৰ্বেদাচাৰ্য শিবকালী ভট্টাচাৰ্য্য
২) BengalPlants – David Prain
৩) Medicinal Plants of India Pakistan – J.F. Dasfur
৪) A Drdionory of Economic products of India – Sir George Watt.
৫) Flora of British India-J.D.Hooker.
৬) Flora Indica-William Roxfurgh.
৭) The book of Indian Trees-K.C. Sahni,
লেখটি বিজ্ঞান অন্বেষক এর জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি /২০১২ থেকে সংগৃহীত।