নামান্তরে -ইংরেজী- Bay leaf, অসমীয়া-তেজপাত, মাহপাত, বাংলা-তেজপাতা, গুজরাতি হিন্দী – তেজপাত, কন্নড় -কভুদালচিনি, মারাঠী – তামাল, দারচিনি, ওড়িয়া ও পঞ্জাৰী-তেজপত্র, সংস্কৃত-তমালকা, তামিল -তালিশপডিবী, তেলুগু -তালিশপত্রী।
নামকরণ ও বিস্তার ঃ- এই পাতাকে বিশেষিত করা হয়েছে তর গুন তেজকে অর্থাৎ আগুনকে অগ্রাধিকার দিয়ে তার নাম দেওয়া হয়েছে তেজপত্র বা তেজপাতা।
তেজপাতার বিস্তারঃ ক্রান্তিয় ও উপক্ৰান্তিয় অঞ্চলে, হিমালয়ের ৩০০০-৭০০০ ফুট উচ্চতায় আর শ্রীহট্ট ও খাসিয়া পাহাড়ে ৩০০০-৪০০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছায়। রােপন করলে প্রায় সমতল ভূমিতেও ভালভাবে বেড়ে ওঠে।এক কথায় ভারত বর্ষের সমস্ত জায়গায় তেজপাতা গাছ জন্মাতে পারে।
তেজপাতা গাছ পরিচিতিঃ—মাঝারী মাপের বৃক্ষ। বাকল ঘন বাদানী ও কুঞ্চিত। পাতা-সাধারণত ১০-১২ সেন্টিমিটার লম্বা আর পাশের ৩.৫-৬.৫ সেন্টিমিটার। তরুন অবস্থায় লালচে, পরে সবুজ, উপরদিক মসৃন ও চকচকে। একান্তর বা বিপরীতমুখী কখনও একই শাখায় দেখা যায়। বেশীর ভাগ পাতাই
বিপরীতমুখী, ডিম্বাকার-আয়তাকার থেকে বল্লমাকার। পাতার শিরাগুলি উপর দিকে স্পষ্ট দেখা যায় এবং নীচে অস্পষ্ট, তবে সিকিমের গাছে কিছুটা স্পষ্ট দেখা যায়। স্পষ্ট শিরা ৩টি তবে ফকনার গাছের দেরাদুনে ৫ শিরাযুক্তচ ডিম্বাকার আয়তাকার পাতা দেখেছেন। প্যানিকলের লম্বত্ব পাতার চেয়ে কম।



তেজপাতা ফুলঃ ১.২৫-২ সেন্টিমিটার লম্বা, পুষ্পপুট কোমী রােমশ, অসমান ভাবে ৬ ভাগে বিভক্ত; খন্ডগুলি লম্বালম্বি শিরতােলা, ডিম্বাকার-আয়তাকার। পূর্ণাঙ্গ রােমশ পুংকেশর ৯, বাইরের ৬টি গ্রন্থিযুক্ত তার ৪ প্রকোটযুক্ত পরাগধানি ভিতর দিকে খুলে যায়। ভেতরের ৩ টির গোড়ায় ২টি করে গ্রন্থি থাকে আর তার ৪ প্রকোষ্টযুক্ত পরাগধানী বাইরের দিকে খেলে ও একদম ভেতরের ৩টি বন্ধ্য পুংকেশর, পুষ্পদন্ডও বৃতি ক্ষুদ্র বৃতাংশ আন্তপাতী। গর্ভকোষ দীর্ঘরােমশ, মুক্ত গর্ভদড সুতার মত। ফল – উপবৃত্তাকার
১.২৫x০.৭৫ সেন্টিমিটার ড্রপ। গােল ধরণের রসালাে, পুরু পুষ্পদণ্ডে যুক্ত থাকে, পাকলে কাল হয়ে যায়।
আবর্তনঃ- এপ্রিল – মে মাসে নতুন পাতার আবির্ভাব। ফুল ফোটে ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিলের মধ্যে ,ফল হয় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে।
উত্তরবঙ্গে যে সমস্ত উদ্যানে গাছটিকে দেখা যাবেঃ – ইসলামপুর, মালউদ্যান, জলপাইগুড়ির তিস্তা উদ্যান আর কোচবিহারের কেশব আশ্রম উদ্যানে।
তেজপাতা গাছের ব্যবহারঃ-বৃক্ষটির কাঠমাঝারী ধরণের শক্ত। যদিও Close grained তবুও চেরাই করা কাঠের ফেঁটে যাওয়া ও মোচরানাের ঝোক আছে। প্রতি ঘন ফুট কাঠের ওজন ৩৯ পাউন্ড।
তেজপাতা এর ব্যাহার ও উপকারিতাঃ
ঔষধিমূল্যঃ—ছাল সুগন্ধযুক্ত, গনােরিয়াতে উপকারী। পাতা উদ্দীপক, বায়ুরােগহর, বাতেশূল বেদনায় এবং বৃশ্চিক দংশনে ব্যাবহার করা হয়।
লোকায়তিক ব্যবহারঃ
চুলকানিতে— ৫ গ্রাম তেজপাতা কুচিয়ে একটু থেতাে করে ৫-৬ কাপ জলে সিদ্ধ করার পর আনুমানিক ২ কাপ থাকতে নামিয়ে হেঁকে প্রত্যহ সেটা ২-৩ বার খেতে হবে। আরও ভাল হয় যদি আরও ১০-১৫ গ্রাম
তেজপাতা সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে স্নান করা যায় (ঈষদুঞ্চ থাকতে)। দাদন ৫ গ্রাম তেজপাতা উপরিউক্ত প্রক্রিয়ায় সিদ্ধ করে ঘেঁকে সেই জল খেতে হবে আর ওই জলে তুলাে ভিজিয়ে দাদের জায়গাটা মুছে দিতে
হয়। এর দ্বারা উপশম হবে।
স্বরভঙ্গে—সর্দি হয়ে বা চিৎকার করে কথা বলার জন্য যে স্বরভঙ্গতার জন্য ৫-৭ গ্রাম তেজপাতা থেতাে করে ৩-৪ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে। সেটা সিদ্ধ হওয়ার পর এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে ঐ জল ৫-৬ ঘন্টার মধ্যে ৩-৪ করে একটু একটু করে খেতে হয় এর দ্বারা স্বরভঙ্গ কমে যাবে।
— বাহ্য প্রয়ােগে
অরুচিতে কয়েকখানা তেজপাতা জলে সিদ্ধ করে হেঁকে সেই জলে কুলকুচি করলে অরুচি কমে যায়।
গায়ের দুর্গন্ধে তেজপাতা চন্দনের মত করে বেঁটে সেইটা গায়ে মাখলে, গায়ের দুর্গন্ধ হওয়া বন্ধ হয়।
ঘামাচি হলে- তেজপাতা চন্দনের মত বেটে গায়ে মেখে ঘন্টা খানেক পরে স্নান করুন৷ গায়ে সাবান দেবেন না। এটাতে গায়ের ময়লাও কেটে যাবে আর ছালার বস্তার মত আপনার গায়ের চামড়ার যে অকন্দা হয়েছিল সেটাও আর থাকবেনা।
লেখক :- প্রণবেশ কুমার চৌধুরী
সূত্র নির্দেশ ঃ চিরঞ্জীব বনৌষধি – শিবকালী ভট্টাচার্য্য
Forest Flora – D. Porands.
Flora Indica – William Roxburgh.
লেখাটি বিজ্ঞান অন্বেষক এর নভেম্বর ডিসেম্বর সংখ্যা থেকে গৃহীত।