আমরা বিভিন্ন রকম ডুয়েলের কথা শুনেছি, ঘটি-বাঙাল , ইলিশ-চিংড়ি , ইস্টবেঙ্গল- মোহনবাগান অনেক কাজিয়া শুনে আমাদের জীবন কাটে।
কিন্তু যে কাজিয়ার কথা আজ পড়বেন তা নিতান্তই বিজ্ঞানের ডুয়েল থুড়ি দুই বিজ্ঞানীর কাজিয়া একে আপনি প্রতিশোধের এক অনুরণন ভাবতে পারেন!
পদার্থবিদ্যার এই লড়াইতে একপক্ষে এডিসন প্রতিপক্ষে নিকোলা টেসলা ! দুই দুঁদে বিজ্ঞানী।
তবে এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছিলো বহু আগে। টেসলা তখন সদ্য তাঁর পঠনপাঠন শেষ করেছেন এবং গবেষণার কাজেও যুক্ত হয়েছেন।
তৎকালীন সময়ে পৃথিবীতে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত গবেষণায় এডিসনের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই ছিলো না।
তাঁর গবেষণাগার নতুনদের জন্য স্বর্গরাজ্য সমতুল্য; টেসলা যোগ দিলেন এডিসনের কোম্পানিতেই।
টেসলার স্বপ্ন এডিসন-এর ল্যাবরেটরিতেই গবেষণা
টেসলার স্বপ্ন ছিলো তিনি ও এডিসন একই সঙ্গে এক ল্যাবরেটরিতেই গবেষণা করবেন তিনি।
১৮৮৪ সাল স্বপ্ন পূরণ হলো টেসলার, তিনি পৌঁছলেন আমেরিকায়। এডিসন তখন জেনারেটর নিয়ে কাজ করছেন।
জেনারেটরের ইঞ্জিনকে উন্নতির চেষ্টাঃ
কীভাবে জেনারেটরের ইঞ্জিনকে আরও উন্নত করা যায় সেই নিয়েই চেষ্টা চালাচ্ছেন এডিসন।
৫০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষনাঃ
টেসলাকে তিনি বললেন তিনি কি চাইছেন এবং সরাসরি প্রস্তাব দিলেন টেসলা যদি এই কাজে সফল হতে পারেন, তাহলে এডিসন তাঁকে ৫০ হাজার ডলার পুরস্কার দেবেন।
টেসলাও কাজ শুরু করলেন এবং গবেষণা চালিয়ে অবশেষে সাফল্য এলো। কিন্তু কথা রাখলেন না এডিসন। হাসতে হাসতে বললেন, তিনি তখন নিছক মজা করেই এ কথা বলেছিলেন।
সঙ্গে আরো জুড়লেন টেসলা একজন সুদক্ষ কর্মচারীর কাজ করেছেন এবং এই কাজের সাফল্যের ফলে আগামীদিনে খুববেশি হলে, তাঁর কাজের স্থায়িত্ব বাড়ানো নিয়ে ভাবাই যেতে পারে।
টেসলা অল্টারনেট কারেন্টের (A.C.)আবিষ্কার করেনঃ
টেসলা স্থির করলেন, আর এখানে নয় ! বহু কষ্টে প্রতিকূলতাকে জয় করে অর্থ সংগ্রহ করে তৈরি করেলেন তাঁর নিজস্ব একটি গবেষণাগার।
সেখানেই হলো বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার ! এ.সি. কারেন্ট আবিষ্কার করলেন টেসলা। অল্টারনেট কারেন্টের আবিষ্কার ও তার দ্রুত প্রচলনে বেশ খানিকটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলেন এডিসন।
তখনই তিনি এই অপপ্রচার চালাতে শুরু করেন, দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে “অল্টারনেটিভ কারেন্ট নিরাপদ নয়“! -এই লাইনটি। মানুষ জন; শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং এর থেকে নানা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে সে সম্ভবনাও ব্যবহারকারী বিশ্বাস করতে শুরু করেন।
যদিও পরিণতি শেষ পর্যন্ত কিছুই হল না! সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক হল যে, স্বল্প খরচে বিদ্যুতের উৎস হিসাবে এ.সি. কারেন্ট ব্যবহার করা হবে । তবে বিপজ্জনক বিভিন্ন কাজে ডি.সি. কারেন্টকেই ব্যবহার করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তুলনায় সহজ সরল বিদ্যুতের বন্টন ব্যবস্থার হওয়ার সুবাদে এ.সি. কারেন্টই জিতে যায়।
অল্টারনেটিভ কারেন্ট নিরাপদ প্রমান করাঃ
এ.সি.( A.C ) কারেন্টকে নিরাপদ প্রমান করতে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন টেসলা !
সে যুদ্ধ ছিলো একে বারে নাটকীয়! সিনেমা সিরিয়ালের চিত্রনাট্যকে হারিয়ে দেওয়া যেনো এক ক্লাইম্যাক্স প্লট!
:focal(2572x2722:2573x2723)/https://public-media.si-cdn.com/filer/15/97/15972379-a704-4c12-8848-196d954896dc/42-55992923.jpg?resize=640%2C480&ssl=1)
:focal(2572x2722:2573x2723)/https://public-media.si-cdn.com/filer/15/97/15972379-a704-4c12-8848-196d954896dc/42-55992923.jpg?resize=640%2C480&ssl=1)
:focal(2572x2722:2573x2723)/https://public-media.si-cdn.com/filer/15/97/15972379-a704-4c12-8848-196d954896dc/42-55992923.jpg?resize=640%2C480&ssl=1)
মঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে একজন, সুপুরুষ দীর্ঘদেহী দীর্ঘকায় ব্যক্তি। ম্যাজিশিয়ানের ভঙ্গিতে মাথার হ্যাটটা খুলে মঞ্চ থেকেই দর্শকদের উদ্দেশ্যে অভিবাদন জানালেন।
তারপর দুহাতে দুটো তামার গোলক ( কারণ তামা তড়িতের সুপরিবাহী ) নিয়ে এগিয়ে গেলেন ইলেকট্রিক ট্রান্সফর্মারের দিকে। দুটি তড়িৎদ্বারে বসিয়ে দিলেন দুটি ধাতব গোলক। তখনও লোকটির দুটি হাত ও শরীর ছুঁয়ে আছে ধাতব গোলকদুটি।
তাঁর শরীর দিয়ে ছুটে গেল ২৫০ কিলোভোল্টের বিদ্যুৎ। আজ্ঞে হ্যাঁ, হা হয়ে যাবে না! সত্যি সত্যি ২৫০ কিলোভোল্ট। যা কিনা আমাদের বাড়ির ইলেকট্রিক লাইনের ৭৮১ গুণ ।
১৮৮৫ সালের কোনো একদিন সংবাদপত্রের শিরোনাম প্রকাশিত হয়েছিলো, মানুষটির শরীরের উপর দিয়ে তখন যেন একটা আগুনের শিখা বয়ে গেল। তবে ঘটনাটি মুহূর্তের জন্যই হয়েছিলো, তারপর আবার সব আগের মতোই হয়ে গেলো।
না, মঞ্চের উপরে পি.সি.সরকার ছিলেন না। যিনি ছিলেন তিনি হলেন পদার্থবিদ্যার কিংবদন্তি নিকোলা টেসলা।
পদার্থবিদ্যা জগতের বিখ্যাত যুদ্ধ:
পদার্থবিদ্যা জগতের এ এক বিখ্যাত যুদ্ধ! দুই কিংবদন্তির যুদ্ধ! একদিকে নিকোলা টেসলা এবং অন্যদিকে টমাস এডিসন।
একদিকে অল্টারনেটিভ কারেন্ট, আর অপরদিকে ডি.সি. কারেন্ট! সেদিনের মতো জিতে গেলেন টেসলা ! জিতে গেলো অল্টারনেটিভ কারেন্ট।
তবে টেসলার আবিষ্কারের অনেক সম্ভাবনাই বাস্তবায়িত হয়নি কারণ তখনও সেই ভাবে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর বিকাশ হয়নি। তবুও বিজ্ঞান সাধক এই কিংবদন্তিকে আজও মনে রেখেছে বিজ্ঞানের ইতিহাস।
লেখকঃ সৌভিক রায়