


প্রতি ৭৫-৭৬ বছর পরপর পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান হয়ে উঠা একটি ধূমকেতু। প্রখ্যাত ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালির নামানুসারে এই ধূমকেতুর নামকরণ করা হয়েছে হ্যালির ধূমকেতু।
৮ ই নভেম্বর এডমন্ড হ্যালির জন্মদিন। ১৬৫৬ সালের আজকের দিনে তাঁর জন্ম হয়।
হ্যালির ধূমকেতুর জ্যোতির্বিজ্ঞান নাম ১পি/হ্যালি। প্রতি শতাব্দীতেই আকাশে কোন কোন তারা অনেক উজ্জ্বলভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। এর অনেকগুলোই আবার দীর্ঘ সময় ধরে দৃশ্যমান থাকে। কিন্তু হ্যালির ধূমকেতু (Halley’s Comet) একমাত্র স্বল্পমেয়াদী ধূমকেতু যা খালি চোখেও স্পষ্ট দেখা যায়।
সে হিসেবে এটি খালি চোখে দৃশ্যমান একমাত্র ধূমকেতু যা একজন মানুষের জীবদ্দশায় দুইবার দেখা দিতে পারে। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে এই ধূমকেতুকে শেষবারের মত দেখা গিয়েছিল। ২০৬১ খ্রিষ্টাব্দে এটি আবার পৃথিবীর আকাশে দেখা দেবে।
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে হ্যালীর ধূমকেতুর পর্যবেক্ষণের জন্য মহাকাশযান ব্যবহার করা হয়েছিল। Giotto ও Vega মিশনে এই ধূমকেতুর তলদেশ ও নিউক্লিয়াস দেখার সুযোগ হয়। জাপান দুটি মহাকাশযানের মাধ্যমে বাড়াকমা পর্যবেক্ষণ করে।
এই ধূমকেতুটি সম্পর্কে, ক্যাসিনি প্রথম জানান যে ১৫৭৭, ১৬৬৫, ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের ধূমকেতু সম্ভবত একই। তার এই অসমাপ্ত ধারণা কাজে লাগিয়ে ১৩৩৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬৯৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ২৪টি ধূমকেতুর তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে , ১৫৩১, ১৬০৭, ১৬৮২ খ্রিষ্টাব্দের ধূমকেতুর ভেতরে অনেক মিল রয়েছে।
এর আগে নিউটন হ্যালির একটি সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে কেপলারের সূত্র থেকে বিপরীত বর্গীয় নীতি প্রমাণ করেন। এই প্রমাণটি নাম On the Motion of Bodies in Orbit । এই বিচারে হ্যালী ধূমকেতুর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার বিবেচনা করেন।
নিউটন ১৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঘোষণা করেন যে, এই ধূমকেতুটি ১৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দের শেষে দেখা যাবে।
পরবর্তীতে Alexis Clairaut, Joseph Lalande এবং Nicole-Reine Lepaute এই তিনজন ফরাসি গণিতবিদ, হ্যালির হিসাবের সামান্য ত্রুটি সংশোধন করেন । তাঁদের হিসেব মতে ১৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্য এপ্রিলে ধূমকেতুটি দেখা যাবে বলে ধারণা পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে এঁদের গণনা যথার্থ প্রমাণিত হয়।
সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব অনুসারে যখন কোনো ভর সমণ্বিত বস্তু মহাবিশ্বের স্থান-কালের কোনো একটি বিন্দুতে অবস্থান করে, তখন তা আসপাশের স্থান-কাল কে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। ভর যত বেশি, দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার পরিমাণও তত বেশি।
সূর্য এমনই এক ভারী বস্তু, যা তার চারপাশের স্থানকালকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে, আর তাই সেই স্থানে গ্রহরা তার চারপাশে পাক খেয়ে চলেছে।
এখন ধূমকেতুগুলিও হল কিছু মহাজাগতিক বস্তু যা সূর্যের তৈরী এই স্থান-কালের গর্তে পড়ে গেছে, এবং তার পর একে কেন্দ্র করে পাক খেয়ে চলেছে।
এই ধূমকেতুগুলি সাধারণত সূর্য সৃষ্টির সময় সৃষ্টি হয়েছে এবং দূরে ছিটকে গেছে। তাদেরই কিছু কিছু এবং এই অঞ্চলগুলি থেকে এসে পড়ে। জমে যাওয়া বিভিন্ন গ্যাস, ধূলিকণা, বরফ, নানারকম পাথর সহ বিভিন্ন পদার্থই হল ধূমকেতুর মুখ্য উপাদান।
সূর্যের কাছাকাছি যখন এই ধূমকেতু গুলি আসে, তখন সূর্যের প্রবল তাপে বরফ, জমে যাওয়া গ্যাস ইত্যাদি পুনরায় গ্যাসীয় অবস্থায় ফিরে যায়, এবং এই রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে ধূমকেতুর লেজ-এর উদ্ভব হয়।
ধূমকেতুর কক্ষপথ অত্যন্ত দীর্ঘ হয় এবং সূর্য থেকে দূরে থাকার সময় এর গতি মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী অনেক কমে যাওয়ার কারণে খুব দীর্ঘ সময় অন্তর অন্তর ধূমকেতু গুলিকে দেখা যায়।



হ্যালির ধূমকেতু মানুষকে কয়েক হাজার বছর ধরে ভাবিয়েছে, মানুষের মনে জন্ম দিয়েছে অপার বিস্ময়ের।
ধূমকেতুর দর্শন খুব কম হওয়ার কারণে এ নিয়ে মানুষের মনে অনেক অহেতুক কুসংস্কারের অস্তিত্বও আছে।
তবে সব ধূমকেতুর ভবিষ্যৎ হ্যালির ধূমকেতুর মতো হয় না। সূর্যের প্রবল উত্তাপে অনেক ধূমকেতু ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। যেমন ২০১২ সালে আবিষ্কৃত আইসন ধূমকেতু সূর্যের কাছে প্রথম পাক লাগানোর সময়ই ভেঙে পড়ে।
২০৬১ সালে আকাশে আবার ফিরে আসবে হ্যালীর ধূমকেতু। তখন আমি বা আপনারা যেখানেই থাকি ,আগ্রহে থাকবে সেই ধূমকেতুতেই!