তাপমাত্রা মাপার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কেল হলো সেলসিয়াস স্কেল।আজ ২৭ নভেম্বর এই স্কেলের প্রণেতা অ্যান্ডার্স সেলসিয়াস ( Anders Celsius) এর জন্মদিন ।
( জন্ম: ২৭ নভেম্বর, ১৭০১ – মৃত্যু: ২৫ এপ্রিল, ১৭৭৪)
যুক্তরাষ্ট্র বাদে প্রতিটি দেশ তাপমাত্রা মাপে সেলসিয়াসে। যুক্তরাষ্ট্র মাপে ফারেনহাইটে। সেলসিয়াস একটা যুক্তিসঙ্গত মাপকাঠি।
সেলসিয়াসে হিমাঙ্ক ধরা হয় ০ ডিগ্রী আর স্ফুটনাঙ্ক ১০০ ডিগ্রী।
অন্যদিকে ফারেনহাইটের হিসাবটা আবার অন্যরকম । ফারেনহাইটে হিমাঙ্ক ধরা হয় ৩২ ডিগ্রী আর স্ফুটনাঙ্ক ২১২ ডিগ্রী। আগের ফারেনহাইটে হিসাব বাদ দিয়ে সবাই মেট্রিক পদ্ধতিতে চলে যাওয়ার সময় থেকে সেলসিয়াসের হিসাব চালু হয়েছে। শুধু আমেরিকাই আগের ফারেনহাইট হিসাবটা আঁকড়ে আছে।
অথচ এর পরিণতি অনেক সময় ক্ষতিকর হয়েছে। মার্কিন হিসাব আর মেট্রিক হিসাবের মধ্যে রূপান্তরের একটি বিভ্রাটে নাসার সাড়ে ১২ কোটি ডলার মূল্যের একটি মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহের আবহাওয়াতে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল।
অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে অর্থাৎ আজ থেকে ৩ শ’ বছর আগেও ফারেনহাইট পদ্ধতিটা সত্যিই খুব দরকারী ও কার্যকর ছিল।
এই ফারেনহাইট পদ্ধতির আবিষ্কর্তা ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট একজন এক জার্মান বিজ্ঞানী।
তরুণ বয়স থেকে তিনি থার্মোমিটার নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলেন । কারণ সে সময় তাপমাত্রা মাপার ব্যাপারটা এক বড় সড় সমস্যা ছিল।
২৮ বছর বয়সে একজোড়া থার্মোমিটার তৈরি করে তিনি বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। নিজের বানানো দুটো থার্মোমিটার একই রিডিং দিয়েছিল। এর আগে কেউ এ কাজ করেন নি। তাঁর ব্যবহৃত স্কেলকেই আজ বলা হয় ফারেনহাইট।
জল ও লবণের দ্রবণ যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় ঘটে, ফারেনহাইট সেটাকে শূন্য ডিগ্রী ধরেছিলেন । তিনি মানুষের শরীরের গড় তাপমাত্রা পরিমাপ করেছিলেন ৯৬ ডিগ্রী, যদিও তা পুরোপুরি ঠিক ছিল না। ফারেনহাইটের হিসাব অনুযায়ী জলের স্ফুটনাঙ্ককে ২১২ ডিগ্রী ও হিমাঙ্ক ৩২ ডিগ্রীতে ধরা হয়।
১৭২৪ সালে ফারেনহাইট ব্রিটিশ রয়াল সোসাইটির সদস্যপদ লাভ করেন এবং তাঁর পদ্ধতি গোটা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে অনুসৃত হয়। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে বিশ্বের বহুদেশে ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তার হয়। এর ফলে তাপামাত্রা পরিমাপের ফারেনহাইট পদ্ধতিও বিশ্বের অধিকাংশ এলাকায় আদর্শ তাপমাত্রায় পরিণত হয়।
বিংশ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে তাপামাত্রা পরিমাপের আধুনিক মেট্রিক পদ্ধতি ‘সেলসিয়াস’ চালু হয়ে যায়। সেলসিয়াস পদ্ধতি ১৭৪২ সালে আবিষ্কার করেছিলেন সুইডিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এন্ডার্স সেলসিয়াস।
১৯৭০ সালে সেলসিয়াস পদ্ধতিকে মেট্রিক পদ্ধতির অঙ্গীভূত করা হয়। সহজ-সরল রূপ ও বৈজ্ঞানিক উপযোগিতার কারণেই মেট্রিক পদ্ধতি এবং সেই সঙ্গে সেলসিয়াস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
যুক্তরাজ্যে সকল পরিমাপ মেট্রিক পদ্ধতিতে শুরু হয় ১৯৬৫ সালে। ব্রিটেনের সাবেক সমস্ত উপনিবেশেও একই ব্যাপারে ঘটে। কোন কোন দেশে ব্রিটেনের আগে ঘটে। আবার অন্যদের পরে ঘটে, যেমন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। একই সময় সর্বত্র এসব পরিবর্তন লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রও মেট্রিক পদ্ধতিতে যাবার কথা ভাবতে থাকে। মেট্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরের জন্য কংগ্রেস ১৯৭৫ সালে একটি আইনও পাস করে। গঠিত হয় মেট্রিক বোর্ড।
কিন্তু যুক্ত্ররাষ্ট্রে সেই আইন আর কার্যকর হয়নি, এর প্রতি বিরোধিতার কারণে। কার্যকর হতে পারেনি, কারণ মেট্রিক পদ্ধতি প্রবর্তনকে বাধ্যতামূলক না করে করা হয়েছিল স্বেচ্ছাভিত্তিক। এ ব্যাপারে জনগণের মতামতের বড় ভূমিকা ছিল।
বিপুলসংখ্যক মানুষ তাপমাত্রা বা ওজন পরিমাপের নতুন পদ্ধতি শিখতে চায়নি। হাইওয়েতে কিলোমিটার সাইন দেওয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে গাড়ি চালকরা। আবহাওয়া পর্যবেক্ষকরা সেলসিয়াসে পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে নিমরাজি হয়। ক্রেতারা কিলোগ্রামে কেনাকাটার সম্ভাবনার কথায় বিরক্ত হয়। জনগণের এমন মন-মেজাজ লক্ষ্য করে প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ১৯৮২ সালে মেট্রিক বোর্ড ভেঙ্গে দেন।
কংগ্রেস যেভাবে এই আইনটি তৈরি করে, তাতে এর বাস্তবায়ন মুখ থুবড়ে পড়ে এবং আমেরিকা যে ফারেনহাইটে-ই তাপমাত্রা মাপবে, তা সুনিশ্চিত হয়। মেট্রিক পদ্ধতির বাইরে থাকার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আজ বিশ্বে কার্যত একা। শুধু বার্মা ও লাইবেরিয়া তার সঙ্গে আছে।
এন্ডার্স সেলসিয়াস (ইংরেজি: Anders Celsius)
জন্ম: ২৭ নভেম্বর, ১৭০১ – মৃত্যু: ২৫ এপ্রিল, ১৭৭৪)
সুইডেনের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। পাশাপাশি তিনি পদার্থবিজ্ঞান, গণিত এবং ভূ-তত্ত্ব বিষয়েও পারদর্শী ছিলেন। ১৭৪২ সালে তিনিই প্রথম সেলসিয়াস তাপমাত্রার সম্বন্ধে আলোকপাত করেছেন; যা পরবর্তীকালে তার নামে নামাঙ্কিত করা হয় সেলসিয়াস থার্মোমিটার রূপে।
সেলসিয়াস থার্মোমিটারে ১০০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় স্ফুটনাঙ্ক এবং হিমাঙ্কের পৃথক নির্দেশনামা তুলে ধরা হয়েছে। যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার পর কার্ল লিনিয়াস এ তাপমান যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেন। সেলসিয়াসই প্রথম পৃথিবীপৃৃষ্ঠে চুম্বকীয় প্রভাব তুলে ধরেন।
আপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭৩০ থেকে ১৭৪৪ সাল পর্যন্ত জোতির্বিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চাকুরীরত অবস্থায় ১৭৪১ সালে সেখানে তিনি একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন ও এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। ১৭৩৩ সালে অরোরা বোরিয়ালিজ নামে ৩১৬টি পর্যবেক্ষণের সংগ্রহশালাকে একত্রিত করে প্রকাশ করেন।
এছাড়াও ১৭৩৭ সালে ফরাসি অভিযানে অংশগ্রহণ করেন যাতে মেরু প্রদেশের মধ্যরেখা নিরূপণের মানদণ্ড প্রণয়ন সংক্রান্ত ছিল। ১৭৩২ থেকে ১৭৩৫ সালের মধ্যে জার্মানি, ইতালি এবং ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।১৭৩৯ সালে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েনসেস গঠনে বিজ্ঞানী লিনিয়াসসহ আরও পাঁচজনের সাথে বিজ্ঞানী সেলসিয়াসেরও উল্লেখযোগ্য অবদান আছে।
২৭ নভেম্বর, ১৭০১ সালে এন্ডার্স সেলসিয়াস সুইডেনের আপসালায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকালেই তিনি গণিতে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন ও দক্ষতার পরিচয় দেন। আপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই তার বাবা শিক্ষকতা করতেন। ১৭৩০ সালে তিনিও জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
কর্মজীবন
১৭৩০ সালে তিনি Nova Methodus distantiam solis a terra determinandi (সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ববিষয়ক নতুন পদ্ধতির নির্দেশনা) প্রকাশ করেন। তিনিই প্রথম অরোরা বোরেলিজ এবং পৃথিবী পৃষ্ঠে চুম্বকীয় প্রভাবের মধ্যেকার সম্পর্ক তুলে ধরেন। ১৭৩৩ সালে ন্যুরেমবার্গে অরোরা বোরেলিজ নিয়ে ১৭১৬-১৭৩২ পর্যন্ত সময়কালের ৩১৬টি পর্যবেক্ষণ নিয়ে বই প্রকাশ করেন।
১৭৩০-এর দশকে তিনি নিয়মিতভাবে জার্মানি, ইতালি এবং ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। প্যারিসে অবস্থানকালে ল্যাপল্যান্ডে মধ্যরেখার বৃত্তচাপ নির্ণয়ে পরামর্শ দেন। ১৭৩৬ সালে ফরাসি গণিতবিদ পিঁয়েরে লুই মপারতুইসের পরিচালনায় ও ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমি’র নির্দেশনায় ফরাসি অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মধ্যরেখায় দৈর্ঘ্য নিরূপণ, মেরুর সাথে সম্পর্ক এবং ইকুয়েডরের বিষুবরেখার কাছাকাছি পেরুতে একই অভিযান পরিচালনা করা। এ অভিযানের ফলাফলে স্যার আইজাক নিউটনের মেরুরেখায় পৃথিবীর চ্যাপ্টা হওয়া সংক্রান্ত মতবাদের প্রমাণ পাওয়া যায়।
১৭২৫ সালে আপসালার রয়্যাল সোসাইটি অব সায়েন্সেসের সেক্রেটারী হয়েছিলেন। ১৭৪৪ সালে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ পদেই তিনি বহাল ছিলেন।
১৭৩৯ সালে গঠিত রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস গঠনে লিনিয়াসসহ আরও পাঁচজনের সাথে সেলসিয়াসও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। একাডেমির প্রথম সভায় তাকে সদস্যরূপে নির্বাচিত করা হয়। সবিশেষ উল্লেখযোগ্য যে, সেলসিয়াস নতুন প্রতিষ্ঠিত এ একাডেমীর নামকরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
5 (1) পরিবেশগত উদ্বাস্তু মানে কী: ১৯৭৬ সালে লেস্টার ব্রাউন সর্বপ্রথম এই শব্দবন্ধটি চয়ন করেন। আর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ মাইগ্রেশন (IOM) ব্যাখ্যা দেন এইভাবে-” পরিবেশের হঠাৎ বা দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয়ের কারণে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হলে, ঘরবাড়ি হারাতে বাধ্য হলে, সাময়িক […]