অনেকে হয়তো এই ফলকে চেনেন না। কিন্তু সুন্দরবনের মানুষজন এ ফলকে চেনেন না ,এটা কখনোই বলা যাবে না। সুন্দরবন ভাবলেই অনেকের শুধু সুন্দরী গাছের কথা মনে হয়। আবার অনেকের গেঁওয়া ,হেঁতাল ,গরান. ইত্যাদির কথা ও হয়তো মনে আসে। তবে সুন্দরবনের মানুষজন বিভিন্ন কারনে কিন্তু এই গাছ আর এই ফলকে বেশি চেনেন।
হাঁ এটি হরেক গুণসম্পন্ন কেওড়া/ক্যাওড়া ফল!
সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গায় নদীর ধার বরাবর সবুজে ভরা কেওড়া গাছ ,আপনার মন কাড়বেই।
সুন্দরবনের বনাঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু গাছগুলির মধ্যে কেওড়া গাছ অন্যতম। এ গাছ পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা করে, তেমনি উপকূলীয় অঞ্চলের ঝড় ও বন্যার থেকে রক্ষাকবচ হিসেবেও কাজ করে।
কেওড়া গাছ পরিবেশসহ উপকূলীয় বেষ্টনী মায়ের মতো আগলে রাখে।
কেওড়া ফলেও রয়েছে অনেক গুণ। সুন্দরবনের বানর ও হরিণের প্রিয় খাবার এই কেওড়া ফল। বানরকুল দল বেঁধে লাফিয়ে লাফিয়ে কেওড়া গাছে ওঠে। উল্লাস করে কেওড়া ফল ভক্ষণ করে। ওদের আনন্দ চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসে হরিণের ঝাঁক। কিন্তু চতুর বানর হরিণকে একটি ফলও খেতে দেয় না। শুরু হয় বানর আর হরিণের অঘোষিত লড়াই। বানর লাফিয়ে গাছে উঠে হরিণকে লক্ষ্য করে ফলের পরিবর্তে গাছের পাতা ছিঁড়ে নিচে ফেলে। কখনো কখনো বানরের টার্গেট মিস হয়ে যায়। পাতা ছিঁড়ে ফেলার সময় কিছু ফলও নিচে ঝরে পড়ে।
কেওড়া গাছের পাতা ও ফল নদী তীরবর্তী বনাঞ্চলের হাজার হাজার বানর ও হরিণের প্রাণ বাঁচায়। কেওড়া ফলটি টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করে অনেক পরিবারের রুজিরোজগার হয়। এই ফলের চাটনি, টক আর ডাল রান্না করে রসনা মেটাচ্ছে অনেকেই। শুনেছি সরকারিভাবে এ ফলটির বিক্রি বৈধ নয় বলে অনেকে অবৈধভাবে এ পেশায় ঢুকে কেওড়া পাচার করছে। তবে এটি বাণিজ্যিক হিসেবে সরকার বৈধ করলে শুধু কেওড়া গাছ নয়, কেওড়া ফলকে ঘিরেও গড়ে উঠতে পারে শিল্প।
নতুন জৈববর্জ্যসমৃদ্ধ, মোটামুটি বা অধিক লবণযুক্ত মাটিতে এ গাছ ভাল জন্মে। ভারত,বাংলাদেশ ও মায়ানমারের বিস্তৃত বনাঞ্চলে এই গাছ দেখা যায়। পাতা সরল, বিপরীতমুখী, অখণ্ড ও চামড়ার মতো। ফুল উভলিঙ্গ। ফল প্রায় গোলাকৃতির এবং ব্যাস ২-৩ সেন্টিমিটার । এর পাতা জিওল গাছের পাতার মতো সরু লম্বাটে। ছোট ছোট হলুদ বর্ণের ফুল হয়। এ ফুলের মধুও সুস্বাদু। একটি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫-১২৫টি। প্যানেল বানানো, প্যাক করার বাক্স তৈরি, আসবাবপত্র ও জ্বালানির জন্য কেওড়ার কাঠ ব্যবহূত হয়।
কেওড়া ফলের ব্যবহার ও গুণ:
কেওড়া ফলের আকৃতি ডুমুরের মতো। সবুজ রঙের ফলের ওপরের মাংসল অংশটুকু অম্ল স্বাদের। ভেতরে বেশ বড় বীজ । সবচেয়ে বেশি উপাদেয় খাদ্য হরিণ আর বানরের। তবে বহু বছর আগে থেকে মানুষ ও মাছের খাদ্য এটি। এফল রান্না করে খাওয়া যায়, অনেকে ডালের সাথেও খেয়ে থাকেন এফলটি। টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় কাঁচা লবণ দিয়ে খাওয়া যায়, আচার হিসেবেও খেয়ে থাকেন এ অঞ্চলের মানুষ। এমনকি এ ফল সিদ্ধ করে রস পান করলে আমাশয় ভালো হয় বলে থাকেন সুন্দরবনের মানুষ । এছাড়াও এ ফলটি পচে গেলে মৎস্য চাষীরা মাছের খাদ্য হিসেবেও একে ব্যবহার করে থাকেন।
শুনেছি কেওড়া ফল বিক্রি করা সরকারিভাবে বৈধ নয়, তারপরেও বনবিভাগের যোগসাজশে কিছু লোভী ব্যবসায়ী এ ফলটি বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে। অবশ্য অনেক দরিদ্র পরিবার এ ফল আহরণ ও বিক্রি করে সচ্ছল হয়েছেন। প্রতি বছর বর্ষার সময় প্রচুর ফলন হয়।
কেওড়া ফল যে একটি সম্ভাবনাময় ফল, এতে কোনো সন্দেহ নেই।এ ফলটি সুস্বাদু। একারণে এটি আচার থেকে শুরু করে খাবারেও ব্যবহার করা হচ্ছে। তেমনি ফুলেও রয়েছে মধু। এ ফলটিতে ক্ষতিকর কোনো কিছু এখন পর্যন্ত গবেষণায় পাওয়া যায়নি। সরকার চাইলে এ ফলটি রপ্তানি করে প্রচুর রাজস্ব ও আয় করতে পারবে।আর সুন্দরবনের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও আসতে পারে। তাই এ ফল নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন।
(আমরা যাকে কেওড়া জল বলি তা এই কেওড়া ফল বা ফুলের নির্যাস নয়। কেওড়া জলকে ইংরেজিতে Screw Pine Water বা Pandanus Water বলে।
কেওড়া জল পানডানাস (Pandanus) মানে কেয়া ফুলের নির্যাস। এটি দেখতে স্বচ্ছ তরল, ঠিক গোলাপ জলের মতো দেখতে।এই কেওড়া জল বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি, মাংস, পানীয় ও বিভিন্ন ভাবে রান্নায় ফ্লোরাল ফ্লেভার আনতে ব্যবহার করা হয়।)
0 (0) ‘এক্স-রে’ টেকনোলজি ‘এক্স-রে’ ব্যাপারটির সঙ্গে কমবেশি সকলেই পরিচিত। কোন দুর্ঘটনাতে আঘাতপ্রাপ্ত হাত-পা কিংবা ভেঙে যাওয়া কোন স্থানকে ডাক্তার প্রথমেই যা করতে বলেন সেটি হল ‘এক্স-রে’। ‘এক্স-রে’ রিপোর্টি দেখে ডাক্তার সিদ্ধান্তে আসেন রোগীর কি ধরনের ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন। ‘এক্স-রে’ ছাড়া ডাক্তাররা সঠিকভাবে দেহের কোথাও ভেঙে যাওয়া অংশ তে কি হয়েছে […]