এখন করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আমরা মাস্কের মতো হাত ধোয়াকে সঙ্গী করেছি। কিন্তু জানেন কি হাত ধোয়া যে স্বাস্থ্য রক্ষার এক অন্যতম উপায় এই কথা যে চিকিৎসক গবেষক সর্বপ্রথম বলেছিলেন তাঁকে মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে নাকি পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল !!
টিভি , রেডিওতে বিজ্ঞাপনে বার বার বলা হচ্ছে বার বার হাত ধোন। আমরা ও সামাজিক মাধ্যমে একে অপরকে বলছি হাত ধোন।
অথচ পৃথিবীর ইতিহাসে রোগজীবাণু থেকে বাঁচতে যে ডাক্তারবাবু বলেছিলেন হাত ধোয়া খুব স্বাস্থ্যসম্মত ,তাঁর হয়েছিল এক করুন পরিনতি !
সেটা ছিল উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় । জীবাণু ছড়ানোর বিষয়টি জানা ছিল না। হাত ধোয়ার প্রচলনটা ছিল কদাচিৎ। টয়লেট থেকে এসে, এমনকি রোগী দেখে এসে বা অপারেশনের আগে সব ডাক্তারবাবুরা ও হাত ধুতেন না।
তখন এখনকার মতো ডাক্তারবাবুদের দস্তানা মানে গ্লাভস পরার চল হয় নি। ডাক্তারবাবুরা মর্গ থেকে এসে যখন রোগী দেখতেন তখন মৃতদেহ থেকে ভয়ংকর ক্ষতিকর কণা (?) রোগীদের মধ্যে সংক্রমিত হত এবং তাদের অপমৃত্যু ঘটত।
হাঙ্গেরিয়ান চিকিৎসক ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ প্রথম এ বিষয়ে লক্ষ্য করেন। ১৮৪৭ সালে স্যামেলওয়াইজ পুরুষ গাইনি ডাক্তারদের নির্দেশ দেন প্রসূতি বিভাগে গর্ভবতী মায়েদের পরীক্ষা করবার আগে হাত ধুতে হবে এবং তাদের ব্যবহ্রত যন্ত্রগুলি ক্লোরিনেটেড লাইম দিয়ে ধুতে হবে। এর ফল হল অবিশ্বাস্য। ওই বছর একজন রোগীরও মৃত্যু হল না।
স্যামেলওয়াইজ এরপর হাত ধোয়ার উপকারিতা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। কিন্তু তাঁর সহকর্মীরা তাঁর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করলেন, কারণ তাদের মনে হল ডাঃ স্যামেলওয়াইজ বলতে চাইছে তারাই, অর্থাৎ চিকিৎসকরাই রোগীর মৃত্যুর জন্য দায়ী। ভিয়েনা হাসপাতালে মৃত্যুহার কমলেও, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও হাত ধোয়ার তত্ত্ব প্রত্যাখ্যান করল।
স্যামেলওয়াইজ মরিয়া হয়ে সকল গাইনি ডাক্তারদের চিঠি লিখতে শুরু করেছিলেন যেন তারা হাত ধুয়ে, ডাক্তারী যন্ত্রপাতি ধুয়ে কাজ করেন। এতে জীবন বাঁচবে। তখন হাসপাতালের কর্মী ও অনেক ডাক্তারবাবু তাঁকে ‘পাগল’ আখ্যা দেন।
এই হাত ধোয়া বিষয়ে প্রকাশ করা একটি বইয়ের প্রচুর নেতিবাচক পর্যালোচনার পর, স্যামেলওয়াইজ তার সমালোচকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং যে সমস্ত চিকিৎসক হাত পরিষ্কার করতেন না তাদেরকে “ঘাতক” বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
অত:পর ভিয়েনা হাসপাতালের সাথে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পর তা পুনঃনবীকরণ না হওয়ায় , স্যামেলওয়াইজ নিজ দেশ হাঙ্গেরিতে ফিরে যান। এরপর বুদাপেস্টের একটি হাসপাতালে তিনি প্রসূতি-বিদ্যা বিভাগে সাম্মানিক চিকিৎসক হিসেবে অবৈতনিক পদে যোগ দেন।
সেখানে এবং ইউনিভার্সিটি অব পেস্ট-এর মেটার্নিটি বিভাগে কাজ করেন। সেখানে তিনি পিউপেরাল জ্বরের বিস্তার নিয়ে চর্চা করেন । কিন্তু তার তত্ত্বের সমালোচনা থামলো না এবং তার প্রবর্তিত পদ্ধতি অনুসরণের বিষয়ে সহকর্মীদের অনীহা স্যামেলওয়াইজের ক্রোধ বাড়িয়ে দেয়।
১৮৬১ সাল নাগাদ তার আচরণে অসঙ্গতি দেখা দিল। কেউ বললো তাঁর ‘নিউরো সিফিলিস’ হয়েছে, কেউ বলল, ‘বদ আত্মা’ ভর করেছে। একজন সহকর্মী তাকে একটি নতুন একটি মেডিকেল ইন্সটিটিউট দেখানোর নাম করে ভিয়েনিজ অ্যাসাইলামে রেখে আসে।
যখন স্যামেলওয়াইজকে বিষয়টি বুঝতে পারলেন তখন তিনি সেখান থেকে পালাতে চেষ্টা করেন, কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে পরিয়ে দেয় স্ট্রেটজ্যাকেট (ভয়ংকর কোন অপরাধী অথবা মানসিক রোগী যাতে অন্যকে আঘাত করতে না পারে সেজন্য বিশেষ পোশাক) এবং এরপর তাঁকে অন্ধকার সেলের ভেতর আটকে রাখা হয়।
তার ডান হাতের ক্ষত থেকে সংক্রমণ হয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন মেন্টাল এসাইলামের গার্ডরা তাঁকে প্রচন্ড মারধর করে । এর ফলে তাঁর হাতে-শরীরে ক্ষত থেকে ডান হাতে গ্যানগ্রিন হয়।
১৮৬৫ সালের ১৩ ই আগস্ট মাত্র ৪৭ বছর বয়সে এক মর্মান্তিক মৃত্যু হয় যুগের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে থাকা যুগান্ত সৃষ্টিকারী চিকিৎসক গবেষক স্যামেলওয়াইজের।তাঁর মৃত্যুতে কোনও ডাক্তার শোকপ্রকাশ করতেও আসেন নি। এমনকি তাঁর মৃত্যুর খবর ‘হাংগেরিয়ান মেডিক্যাল সোসাইটি’ তাদের পত্রিকায় প্রকাশও করেনি ।
কেবলমাত্র মৃত্যুর পরেই কিছুটা স্বীকৃতি মিলেছে স্যামেলওয়াইজের ।
জীবাণু তত্ত্ব অর্থাৎ রোগের উৎপত্তি জীবাণু থেকে হতে পারে আবিষ্কারের অনেক বছর পর তাঁর কাজের স্বীকৃতি মেলে।তাঁকে বর্তমানে হ্যান্ড হাইজিনের জনক বলা হয়।
তাঁকে সম্মান জানাতে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে তাঁর একটি বড় স্মৃতিস্তম্ভ বসানো হয়েছে।
5 (1) পেঁয়াজ কাটলে চোখে জল আসে কেন? বাঙালির রান্নাঘরে পেঁয়াজ ও রসুন দেখা যায় না এরকম পরিবারের সংখ্যা খুব কম। পিয়াজ ও রসুন এই দুই সদস্যের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কিছুটা এক ধরনের। তবে পেঁয়াজ কাটতে গেলে আমাদের চোখে জল আসে, যেটা রসুন কাঁটলে হয় না। পিঁয়াজের মধ্যে কি এমন আশ্চর্য […]