ইলেকট্রন যে একটি উপ-পারমাণবিক কণিকা (sub-atomic particle) তা সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী জে. জে. থমসন ( Joseph John Thomson) ১৮৯৭ সালে আবিষ্কার করেন।
ইলেকট্রনের আবিস্কারক জে জে থমসন
১৮ই ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিশ গবেষণাগারে ক্যাথোড রশ্মি নল নিয়ে গবেষণা করার সময় তিনি তিনি ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন।
ক্যাথোড রশ্মি নল হল একটি সম্পূর্ণ বদ্ধ কাচের সিলিন্ডার যার মধ্যে দুইটি তড়িৎদ্বার (electrode) শূন্য স্থান দ্বারা পৃথক করা থাকে। যখন দুইটি তড়িৎদ্বার মধ্যে বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করা হয় তখন ক্যাথোড রশ্মি উৎপন্ন হয় এবং এর ফলে নলের মধ্যে আভার সৃষ্টি হয়।
উপর্যুপরী পরীক্ষার মাধ্যমে থমসন প্রমাণ করেন যে চৌম্বকত্বের সাহায্যে রশ্মি থেকে ঋণাত্মক আধান পৃথক করা যায় না; তবে তড়িৎ ক্ষেত্র দ্বারা রশ্মিগুলোকে বিক্ষিপ্ত করা যায়।
মূলত ইলেকট্রনের আবিষ্কার এবং এর অংশসমূহ সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে গিয়ে থমসনকে তিন তিনটি পরীক্ষা সম্পাদন করতে হয়েছিল:
প্রথমত:
এই পরীক্ষার সাথে ১৮৯৫ সালে জ্যাঁ পেরিন কৃত পরীক্ষার বেশ মিল ছিল। থমসন এক জোড়া ধাতুর সিলিন্ডার দ্বারা একটি ক্যাথোড রশ্মি নল তৈরি করেন যার মধ্যে একটি সংকীর্ণ ফাঁক ছিল।
এই সিলিন্ডারদ্বয় আবার একটি ইলেকট্রোমিটারের সাথে সংযুক্ত ছিল যাতে তড়িৎ আধান সংরক্ষণ এবং পরিমাপ করা যায়। পেরিন দেখেছিলেন ক্যাথোড রশ্মি একটি তড়িৎ আধান জমা করে।
থমসন দেখতে চেয়েছিলেন একটি চুম্বকের মাধ্যমে রশ্মিগুলো বাঁকিয়ে রশ্মি থেকে আধান পৃথক করা যায় কি না।
তিনি দেখতে পান রশ্মিগুলো যখন সিলিন্ডারের সরু ফাঁকে প্রবেশ করে তখন ইলেকট্রোমিটারে ঋণাত্মক আধানের আধিক্য দেখা যায়।
রশ্মিগুলো বাঁকিয়ে দিলে মিটারে ঋণাত্মক আধানের পরিমাণ এতো হয়না, কারণ রশ্মি তখন ফাঁকে প্রবেশেরই সুযোগ পায় না।
এ থেকে স্পষ্টতই ধারণা করে নেওয়া যায় যে ক্যাথোড রশ্মি এবং ঋণাত্মক আধান যেভাবেই হোক একসাথে থাকে, এদের পৃথক করা যায় না।
দ্বিতীয়ত:
পদার্থবিজ্ঞানীরা তড়িৎ ক্ষেত্রের সাহায্যে ক্যাথোড রশ্মি বাঁকানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এবার থমসন একটি নতুন পরীক্ষণের কথা চিন্তা করেন।
একটি আয়নিত কণা তড়িৎ ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত হলে অবশ্যই বেঁকে যাবে, কিন্তু যদি একে যদি একটি পরিবাহী দ্বারা ঘিরে দেওয়া হয় তবে আর বাঁকবে না।
তিনি সন্দেহ করেন যে নলের মধ্যে বিরাজমান গ্যাস বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্যাথোড রশ্মির কারণেই তড়িৎ পরিবাহীতে পরিণত হয়েছে।
এই ধারণা প্রমাণ করার জন্য অনেক কষ্টে তিনি একটি নলকে প্রায় বিশুদ্ধ শূণ্যস্থান করতে সমর্থ হন।
এবার পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায় ক্যাথোড রশ্মি তড়িৎক্ষেত্রে দ্বারা বেঁকে যাচ্ছে। এই দুইটি পরীক্ষণ থেকে থমসন সিদ্ধান্তে পৌঁছান,
“আমি এই সিদ্ধান্তে থেকে কোন ভাবেই পালাতে পারি না যে ক্যাথোড রশ্মি হল ঋণাত্মক তড়িৎের আধান যা পদার্থের কণিকা দ্বারা বাহিত হয়।…. এই কণিকাগুলো কি? এরা কি পরমাণু, অথবা অণু, অথবা এমন পদার্থ যা এখন পর্যন্ত উপবিভাগের একটি সূক্ষ্মতম পর্যায়ে রয়েছে?”
তৃতীয়ত:
থমসনের তৃতীয় পরীক্ষার বিষয়বস্তু ছিল কণিকাসমূহের মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ অনুসন্ধান করা।
তিনি যদিও এ ধরনের কোন কণিকার সরাসরি ভর বা আধান বের করতে পারেন নি, তবে চুম্বকত্বের দ্বারা এই রশ্মিগুলো কতটা বাঁকে এবং এদের মধ্যে কি পরিমাণ শক্তি রয়েছে তা পরিমাপ করতে পেরেছিলেন।
এই উপাত্তগুলোর মাধ্যমে তিনি একটি কণিকার ভর এবং এর তড়িৎ আধানের মধ্যে একটি অণুপাত বের করেন।
নিশ্চয়তার জন্য তিনি অনেক ধরনের নল এবং গ্যাস নিয়ে পরীক্ষণ সম্পাদন করার মাধ্যমে উপাত্তগুলো সংগ্রহ করেন।
এই অণুপাত থেকে বেশ আশ্চর্যজনক ফল পাওয়া যায়; এর মান একটি আয়নিত হাইড্রোজেনের তুলনায় এক হাজার গুণেরও বেশি ছোট হয়।
১৮৯৮ সালে বিজ্ঞানী জে জে থমসন যে কিশমিশ পুডিং মডেল প্রস্তাব করেন তাতে তিনি বলেন যে, পুডিংয়ের ভিতরে কিশমিশ যেমন বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকে পরমাণুতে ঠিক তেমনি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বন্টিত ধনাত্মক আধানের মধ্যে ইলেকট্রন ছড়িয়ে আছে।
এই মডেলকে তরমুজ মডেল বলা যেতে পারে। তরমুজের রসালো অংশকে যদি ধনাত্মক আধান বিবেচনা করা হয় এবং তরমুজের বীজকে যদি ঋনাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রন মনে করা হয় তাহলে তরমুজের রসালো অংশের মধ্যে বীজগুলোর বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকাকে থমসন পরমাণু মডেলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
থমসন বলেছিলেন যে ইলেকট্রন গুলোর মধ্যে তড়িত মিথস্ক্রিয়ার দরুন এরা এক আংস্ট্রম পর্যায়ের ব্যাসার্ধের কল্পিত গোলাকৃতি পরমাণুর ভিতর সুবিন্যস্ত থাকে।
গ্যাসের ভিতর দিয়ে তড়িৎ পরিবহন কিভাবে হয় সেই আবিস্কারের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯০৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।
ইলেকট্রনের আবিস্কারক জে জে থমসন ১৮৫৬ সালের ১৮ ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
0 (0) এ গভীর জলের মাছ! ক্যাপশন দেখে আবার অন্য কিছু ভাববেন না যেন! কারণ, ‘গভীর জলের মাছ’ বলতে খুব ধুরন্ধর ব্যক্তি কে বোঝানো হয় । কিন্তু এখানে আক্ষরিক অর্থেই এক গভীর জলের মাছের কথা বলতে যাচ্ছি। স্নেইল ফিশ নামে এক প্রজাতির(Pseudoliparis swirei) মাছের বিচরণক্ষেত্র সমুদ্রপৃষ্ঠের ২৭ হাজার ফুট গভীরে! […]