পরিবেশ কাকে বলে ?
আমাদের আশেপাশের জীব ,জন্তু ,জল ,বায়ু ,গাছপালা,সকল ধরনের সজীব ও নির্জীব পদার্থ যা আমাদের জীবন কে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আমাদের জীবন-কে প্রভাবিত করে এদের সকলকে নিয়ে আমাদের পরিবেশ।
আবার অন্য ভাবে বলা যায় কোন জীবের চারপাশে থাকা জীবটির উপর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াকারী এবং প্রভাব বিস্তারকারী সমস্ত সজীব ও জড় পদার্থ সকলকে একত্রে ঐ জীবের পরিবেশ বলা হয়।
বিভিন্ন বিজ্ঞানী-গন বিভিন্ন সময়ে পরিবেশের বিভিন্ন সজ্ঞা দিয়েছেন
আর্মস, তাঁর “এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স” নামক গ্রন্থে পরিবেশের সংজ্ঞা দিতেগিয়ে ১৯৯৪ সালে বলেছেন যে, “জীব সম্প্রদায়ের পারিপার্শ্বিক জৈব এবং প্রাকৃতিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে”
১৯৭৬ ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রােগ্রাম UNEP পরিবেশের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিল
“পরিবেশ বলতে পরম্পর ক্রিয়াশীল উপাদানগুলির মাধ্যমে গড়ে ওঠা সেই প্রাকৃতিকও জীবমন্ডলীয় প্রণালীকে বােঝায় যার মধ্যে মানুষ ও অন্যান্য সজীব উপাদানগুলি বেঁচে থাকে, বসবাস করে”
১৯৯৫ সালে তাদের “এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স” নামক গ্রন্থে পরিবেশ বিজ্ঞানী টনি এবং কেলার,পরিবেশের সজ্ঞা দিতেগিয়ে বলেছেন যে
“জীব, উদ্ভিদ বা প্রাণী তাদের জীবনচক্রের যে কোন সময়ে যে সমস্ত জৈব এবং অজৈব কারণগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়, সেই কারণ গুলির সমষ্টিকে পরিবেশ বলে।”
সুতরাং পরিবেশ হল সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক,ধার্মিক অবস্থা যা মানুষের জীবন কে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রভাবিত করে ।
পরিবেশ (Environment) কয় প্রকার ও কি কি ?
আমাদের পরিবেশকে সাধারণ ভাবে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
১.ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ
মহাবিশ্বের সমস্ত জড় বস্তু যেমন জল,বাতাস, আলো, তাপ ,মাটি, পাহাড়, পর্বত, নদী,নালা, খাল , বিল,রাস্তাঘাট, আলো প্রাকৃতিক পরিবেশের অংশ।
২.জীবজ পরিবেশ
মানুষ, গাছপালা, জীবজন্তু, পশু ,পাখি,জীবাণু ইত্যাদি জীবের মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্কই হল জীবজ পরিবেশ।
৩. সামাজিক পরিবেশ
মানুষ দ্বারা নির্মিত মানুষের নিজের পরিবেশ হল সামাজিক পরিবেশ।
সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলি হল
রাজনীতি
অর্থনীতি
ধর্ম
খেলাধুলা
শিক্ষা
স্বাস্থ্য
মুল্যবোধ
জীবন সংগ্রাম
এগুলি সবকিছুর মিশ্রনই হল মানুষের সামাজিক পরিবেশ।
পরিবেশের উপাদানসমূহ (Components of
Environment)
পরিবেশের উপাদানগুলি দুই ধরনের হয়।
১. জড় বা অজৈব উপাদান
পরিবেশের জড় উপাদানগুলি হল,
জল
বাতাস
আলো
মাটি
পাহাড় পর্বত
নদী-নালা
খাল-বিল
রাস্তাঘাট
আলো ইত্যাদি।
২. সজীব বা জৈব উপাদান
মানুষ
গাছপালা
জীবজন্তু
পশু
পাখি
জীবাণু এগুলি পরিবেশের সজীব উপাদান।
আবার পরিবেশের এই উপাদানগুলিকে প্রধানতঃ চার ভাগে ভাগ করা হয়।
১. আবহাওয়া জনিত উপাদানঃ
(i) তাপমাত্রা,
(ii)আলােক,
(iii) বাতাসের জলীয় বাষ্প
(iv) বৃষ্টিপাত,
(v) বায়ু।
২. ভূ-পৃষ্ঠীয় উপাদান ঃ
(i) পাহাড় ও পর্বতের নতি,
(ii) উচ্চতা।
৩. মাটির উপাদানঃ
(i) মাটির উৎপত্তির বিভিন্ন শর্তাবলী
(ii) মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব গঠন।
৪. জৈবিক উপাদানঃ
প্রাণী,উদ্ভিদ ও বিভিন্ন আণুবীক্ষণিক জীবদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক।
পরিবেশ বিদ্যা বা পরিবেশ বিজ্ঞান কাকে বলে ?
বিজ্ঞানের যে শাখায় মানুষ ও তার আশেপাশের জীবজন্তু, উদ্ভিদ, প্রানি,মাটি জল , আল,বায়ু ইত্যাদির মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচিত হয় তাকে পরিবেশ বিদ্যা বা পরিবেশ বিজ্ঞান বলে।
অর্থাৎ মহাবিশ্বের সমস্ত জিনিসই পরষ্পর পরষ্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। কোন একটি জিনিসের অনুপাত বা অবস্থানের পরিবর্তন হলেই পরিবেশের পরিবর্তন হয়। তাই মহাবিশ্বের সমস্ত জিনিসের সম্পর্কে আলোচনা,গবেষনা পরিবেশ বিদ্যা বা পরিবেশ বিজ্ঞানের মধ্যে পরে।
পরিবেশ বিদ্যা ( Environmental Science)পাঠের
প্রয়োজনীয়তা
১• পরিবেশে প্রত্যেকটি জীব প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে সম্পর্কিত। কোন একটি জীব বা মানুষ পরিবেশে আলাদা ভাবে বেঁচে থাকতে পারবে না। তাই পরিবেশ বিদ্যা পাঠের মাধ্যমে মানুষ প্রত্যেকটি জীব ও জন্তুর মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্ক আরও বেশী করে জানতে পারে।
২• পরিবেশ বিদ্যা ( Environmental Science) পাঠের মাধ্যমে আমরা পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারি।
৩• পরিবেশ দূষনের ফলে উৎপন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারি পরিবেশ পাঠের মাধ্যমে।
৪• পরিবেশ দূষনের ফলে কোন রোগ সৃষ্টি হলে সেই রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের ব্যাবস্থা আমরা শিখি পরিবেশ বিদ্যা পাঠের মধ্যদিয়ে।
৫• পৃথিবীর জল , মাটি, বাতাস ভাল রাখার জন্য পরিবেশ বিদ্যা পাঠ জরুরী।
৬• ভবিষ্যত প্রজন্মকে পরিবেশ দূষনের হাত থেকে বাঁচাতে পরিবেশ বিদ্যা পাঠ প্রয়জনীয়।